[Total_Soft_Poll id=”5″]
২০১৪ সালে জেলা ভাগের ৫ বছর পর এ বছর জলপাইগুড়ির জন্মের ১৫০ বছর পূর্তি। ভোটের আবহতেও গোটা জেলা জুড়ে সেই উচ্ছ্বাস চোখে পড়ছে। এই উচ্ছ্বাসের কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া নানা উপহারও। ২০১৯ সালের ৯ মার্চ জলপাইগুড়িতে নতুন সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন হয়। এই জেলার মাটিতেই গড়ে উঠেছে রাজ্য সরকারের শাখা সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’। পর্যটকদের জন্য তৈরি হয়েছে দুটি চমৎকার ঠিকানা। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের গজলডোবা ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প ‘ভোরের আলো’ এবং বন্যপ্রাণীর উন্মুক্ত চিড়িয়াখানা ‘বেঙ্গল সাফারি’ পার্ক। গড়ে উঠেছে স্পোর্টস কমপ্লেক্স অর্থাৎ বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন। উন্নয়নের এই সাজানো বাগানেই এবারের লোকসভা নির্বাচন। আর এই উন্নয়নেই কোণঠাসা বিরোধীরা।
প্রসঙ্গত, ভুটান-কোচবিহার-বৈকুণ্ঠপুর-রংপুরের অংশ নিয়ে দ্বিতীয় ইঙ্গ-ভুটান যুদ্ধের পর ১৮৬৯ সালের ১ জানুয়ারি ভূমিষ্ঠ হয়েছিল জলপাইগুড়ি জেলা। তারপর বহু কাটাছেঁড়া হয়েছে এই জেলার মানচিত্রে। শেষবার ২০১৪ সালে আলিপুরদুয়ার মহকুমাটিকে কেটে পৃথক জেলা গঠন করে তৃণমূল সরকার। আলিপুরদুয়ারের মানুষের কাছে এই জেলা গঠন ছিল ঐতিহাসিক উপহার। যার জেরে চা-বলয়ে আরএসপি-র একসময়ের দুর্গ ভেঙে খান খান হয়ে যায়। আলিপুরদুয়ারের পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, বিধানসভা থেকে লোকসভা, সবই তৃণমূলের দখলে। জেলা ভাগ হওয়ায় আলিপুরদুয়ারে যেমন খুশির জোয়ার, জলপাইগুড়িতে তখন ছিল চাপা অভিমান। কারণ, পর্যটনের আসল ঠিকানাগুলো থেকে যায় আলিপুরদুয়ারের সঙ্গে। কিন্তু গজলডোবার ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প ‘ভোরের আলো’ এবং বন্যপ্রাণীর উন্মুক্ত চিড়িয়াখানা ‘বেঙ্গল সাফারি’ পার্ক হওয়ার পর আর কোনও অভিমানই নেই জেলার বাসিন্দাদের।
[Total_Soft_Poll id=”6″]
১৮৭৪ সালে এই গজলডোবাতেই প্রথম চা-বাগান স্থাপন করে ব্রিটিশরা। কিন্তু সেই চা শিল্পে ইদানীং একটা আশঙ্কার জায়গা দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই কারণে-অকারণে মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করে দিচ্ছেন। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে হাজার হাজার চা শ্রমিকদের ওপর। একদিকে বন্ধ বাগান খোলার চেষ্টা, অন্যদিকে চা-বলয়ে বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি করা। পর্যটনের নতুন ঠিকানাও তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। আর তাতেই ধস নেমেছে বিরোধীদের সংগঠনে। বাগরাকোটে বিমল গুরুংদের যে সংগঠন ছিল, তা প্রায় উধাও। তাঁদের অনেকেই এখন তৃণমূলের ঝাণ্ডা হাতে দাবি আদায়ের লড়াই করছেন। সেজে উঠেছে শহরের বিভিন্ন এলাকাও। মার্বেল আর টাইলসে রাজকীয়ভাবে বাঁধানো রাজবাড়ি ঘাট। করলা নদীর পাড়ে বসানো হয়েছে নজরকাড়া বেঞ্চ। আর আলোর ফুলঝুরি। প্রতিটি রাস্তা মসৃণ। নীল-সাদা রঙে চিক চিক করছে। সেজে উঠেছে মালবাজারও।
এইসব কারণেই এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মনকে প্রচারে গিয়ে কোনও অভিযোগই শুনতে হচ্ছে না। তিনি বেশ স্বস্তির সঙ্গে জানালেন, ‘বঞ্চনার ইতিহাস এখন অতীত। যেখানে যাচ্ছি, নানা কাজের জন্য মানুষ এসে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যাচ্ছেন। তাই জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’ অন্যদিকে, বিজেপি এখানে অনেকটাই ছন্নছাড়া। প্রার্থী জয়ন্ত রায় আদৌ দাঁড়াতে পারবেন কিনা, তা নিয়েই সংশয় ছিল। শেষমেশ ছাড়পত্র পেলেও প্রচারে সাড়া নেই। একসময় এই লোকসভা ছিল বামেদের দুর্গ। কিন্তু পাঁচ বছর আগে এই কেন্দ্র হাতছাড়া হওয়ার পর থেকে সংগঠন ক্রমশ ফিকে। প্রার্থী ভগীরথ রায় বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রেও তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
[Total_Soft_Poll id=”7″]
উন্নয়নের ধাক্কায় জলপাইগুড়ির কেএলও আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে। কেপিপি তৃণমূলকে সমর্থন করেছে। কিন্তু রাজবংশী মানুষদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও চলছে। জলপাইগুড়ি জেলার ৬টি কেন্দ্রের সঙ্গে রয়েছে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ। জয়ী সেতু হওয়ায় এই এলাকায় শাসক দল অনেকটাই এগিয়ে। একসময় তিস্তা-করতোয়া ছিল উত্তর বাংলার প্রধান জনপদ। এই নদী দেখেছে বহু জাতির উত্থান-পতন। এই নদীর পলি শস্য শ্যামলা করেছে উত্তরকে। আবার বন্যা ধ্বংস করেছে বহু জনপদ। এই তিস্তার চোখের সামনে আজও ভাঙছে মানিক সান্যাল, মিনতি সেনদের লালদুর্গ। আর উন্নয়নের বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিচ্ছে তিস্তাপাড়ের রূপশ্রী, কন্যাশ্রীরা, যুবশ্রীরা। ফলে বিজেপি, সিপিএমকে পিছনে ফেলে এই আসনে এবার পাল্লা ভারী তৃণমূলেরই।