মানুষের মমতা
নববর্ষের প্রথমদিন থেকেই শুরু হয়ে গেল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সফরের দ্বিতীয় পর্যায়। চাঁদিফাটা রোদ, তার মধ্যেই তিনি মুর্শিদাবাদের� বেলডাঙাতে সভা শেষ করে পৌঁছে গেছেন ভগবানগোলায়। অসহ্য গরমের মধ্যে ছায়া খুঁজতে সভা হচ্ছে আমবাগান সংলগ্ন এলাকায়। চারপাশে আমগাছ ঘেরা সভাস্থলে থিকথিকে ভিড়, গরমে আমরা তো বটেই সভায় আসা গ্রামের মানুষও� নাজেহাল। কিন্তু কেউই তাদের জায়গা ছেড়ে নড়ছেন না। মানুষ আসার কোন বিরাম নেই।
প্রতিবার নববর্ষের দিন আমি দিদিকে প্রণাম করি। কিন্তু আজ সকাল থেকে সে সুযোগ পাইনি। বেলডাঙায় ভিড় ও দিদির ব্যস্ততার ঠ্যালায় তার কাছে যাওয়াই গেলনা। টার্গেট করলাম, ভগবানগোলার জনসভার শেষে তাকে একটা প্রণাম করে নেবো। কিন্তু ভিড়ের চেহারা এবং দিদির ব্যস্ততা ভগবানগোলায় আরও বেশি। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে সকাল থেকে এসে বসে আছেন। সভাস্থল সংলগ্ন হেলিপ্যাডের চারপাশেও তিল ধারণের জায়গা নেই।
ভাষণ শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত চললেন হেলিপ্যাডের দিকে। ভগবানগোলার পর এবার তার গন্তব্য মালদা। আমি ভেবে ফেললাম দিদি হেলিকপ্টারে ওঠার আগেই প্রণামটা সেরে নিতেই হবে। আমি দ্রুত তার কাছে গিয়ে প্রণামটা সেরে নিলাম, জানালাম নববর্ষের শুভেচ্ছা। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল, বাংলা কেন দেশের অসংখ্য মানুষ তাকে প্রণাম করতে চান। মুখ্যমন্ত্রীও বিরাট কোন পুলিশি ঘেরাটোপে থাকা পছন্দ করেন না। কিন্তু কাজের ব্যস্ততা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে তার সকলের প্রণাম গ্রহণ করার সুযোগ সবসময় থাকেনা। আমি খুব ভাগ্যবান যে কর্মসূত্রে তার সফরসঙ্গী হওয়ার কারণে বিশেষ বিশেষ দিনে আমার তাকে প্রণাম করার সুযোগ হয়ে যায়।
প্রনাম করার পরই তিনি একটু থমকে দাঁড়িয়ে চারদিক দেখলেন। চারপাশের ভিড়ের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছিলেন তিনি। তারপর আমার ও সাংবাদিক বিশ্ব মজুমদারের দিকে তাকিয়ে বললেন, এত লোক গাছে! দেখেছিস, গাছের ওপর কীভাবে লোকজন ঝুলছে? পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে যাবে তো! কী যে করে না এরা! আমার ছবি তুলতে হবে না, এদের ছবি তোল। আমি বললাম, হ্যাঁ এদের ছবিও তুলেছি। মানুষের বিপদের আশঙ্কা তার ব্যস্ততাকে স্তব্ধ করে দিল, তাকে বিব্রত দেখাচ্ছিল। খোঁজ নিয়ে জানলাম স্থানীয় নেতৃত্ব উৎসাহী মানুষদের গাছে উঠতে বারণ করেছিলেন, কিন্তু নাছোড়বান্দা মানুষের কাছে হার মেনেছে নিরাপত্তা। একটু পরেই যেন সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দিদি বললেন, দাঁড়া আমিও কিছু ছবি তুলে রাখি। এই বলে নিজেই মোবাইল বার করে প্রায় দু-তিন মিনিট ধরে ছবি তুললেন। এরপর পিএসও স্বরূপ গোস্বামী সহ মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার উড়ে গেল মালদার দিকে।
ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি ও আরএসএস এর লোকজন একটা হাস্যকর ব্যাপার শুরু করেছেন। অবশ্য এটা তারা যত করবেন ততই তারা নিজেদের মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণ করবেন। এরা মুখ্যমন্ত্রীর সভা শুরু হওয়ার বহু আগে গিয়ে সভাস্থলের কিছু ফাঁকা জায়গার ছবি তুলে রাখছেন। তারপর মুখ্যমন্ত্রীর অমুক জায়গার জনসভায় কোন লোক হয়নি মার্কা ক্যাপশন দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়ছেন।
গ্রীষ্মের মুর্শিদাবাদ মানেই গাছে গাছে আম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভার কল্যাণে গাছের সেই আম ঢাকা পড়েছে মানুষের মাথায়। আমের পাশাপাশি গাছে ঝুলছেন মানুষ। কর্মসূত্রে দিদির সফরসঙ্গী হওয়ার সুবাদে এই আজব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হল আমার।
শুভ নববর্ষ, সবাই ভালো থাকবেন।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত