‘১৪২৬ বিয়াল্লিশে ৪২৷ জনগণের দরকার, নতুন সরকার৷ আগামী দিন বাংলাকে দিল্লীতে সরকার গড়তে দিন৷’ বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের সমর্থনে ইটাহারের জনসভা থেকে এভাবেই দিল্লীতে সরকার বদলের ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাশপাশি জানিয়ে দিলেন, বাংলা-উত্তরপ্রদেশই ঠিক করবে দিল্লীতে কে সরকার গঠন করবে। আর বাংলায় বিজেপি রসগোল্লা পাবে।
মঙ্গলবারের সভায় প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক রণনীতি গ্রহণ করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ তিনি অভিযোগ করেন, গত পাঁচ বছর ধরে কেন্দ্রে জনবিরোধী সরকার চলেছে৷ নোট বাতিল, জিএসটি, এনআরসি ও নাগরিকপঞ্জীর মাধ্যমে সবকরম ভাবে মানুষের ক্ষতির চেষ্টা করেছে এই সরকার৷ বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘ধর্মের ভিত্তিতে বিজেপি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করে৷ অন্যধর্মের মানুষকে খুন করে৷ কিন্তু আমরা ধর্মনিরপেক্ষ সরকার৷ এরাজ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই৷ আমরা সমস্ত ধর্মস্থানের উন্নয়ন করেছি৷ সংখ্যালঘুদের ধর্মস্থানেরও উন্নয়ন করেছি’৷
গত কয়েক বছর ধরেই রাম নবমীতে অস্ত্র মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছে রাজ্য রাজনীতি৷ এবার নির্বাচনের মরশুমেও তার অন্যথা হয়নি৷ এবারও রাজ্যে একাধিক স্থানে অস্ত্র হাতে মিছিল করতে দেখা গিয়েছে গেরুয়াপন্থীদের৷ গদা হাতে মিছিলে দেখা গিয়েছে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও৷ ইটাহারের সভামঞ্চ থেকে এই ধরনের অস্ত্র মিছিলকে আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী৷ বলেন, ‘এরাজ্যে গদা-তলোয়ার নিয়ে মিছিল কেন হবে? মা দুর্গার হাতে ত্রিশূল রয়েছে বলে আমরাও কি তা হাতে তুলে নেব? বিজেপি বিভেদের রাজনীতি করে৷ কিন্তু হিন্দুধর্ম অনেক বড়৷ আমাদের হিন্দুধর্ম যেমন মহান৷ তেমনই ইসলাম ধর্মও মহান৷ সকলের ধর্মকে সম্মান করা উচিত৷’ কেবল বিজেপি’ই নয়, এদিন একযোগে বাম-কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বলেন, ‘ওদের ভোট দিয়ে মূল্যবান ভোট নষ্ট করবেন না৷’
রাজ্য সরকারের একাধিক জনহিতকর প্রকল্পের বিবরণ মানুষের সামনে পেশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলেন, ‘সাড়ে সাত কোটি লোককে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ বাড়ির মায়েদের নামে হবে সেই কার্ড৷ যার সাহায্যে বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা করে চিকিৎসা বিমা পাবে মানুষ৷ আমি রেলমন্ত্রী হয়ে অনেক ট্রেন দিয়েছি৷ বালুরঘাটে একলাখি রেলপ্রকল্প করেছি৷ বিজেপি বাংলায় কোনও নতুন ট্রেন দেয়নি৷ বহু কাজ অর্ধসমাপ্ত হয়ে রয়েছে৷ বিজেপি সরকার কোনওকিছু করেনি৷ ইটাহারে বহু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে৷ উত্তরকন্যা তৈরি করেছি৷ বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে৷ আমাদের সরকার আশাকর্মী-সহ একাধিক পেশার মানুষের বেতন বাড়িয়েছে৷ জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ তৈরি হয়েছে৷ আমাদের সরকার কৃষকদের জন্য জমির মিউটেশন ফি মুকুব করেছে৷ শস্যবিমার টাকাও রাজ্য সরকার দিচ্ছে৷ কৃষকদের ৫০০০ টাকা দিচ্ছে রাজ্য৷ বন্যাবিধ্বস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি আমরা৷ খরার সময় মানুষদের সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার’।