আজ সাতগাছিয়ার বাখরাহাটে সাঁজুয়া মাঠে জনসভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভামঞ্চ থেকে বিজেপির মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তিনি। একই সঙ্গে বলে গেলেন আগামি ২৩ মে-র পরে বাংলার মাটিতে খুঁজে পাওয়া যাবে না বিজেপিকে।
বক্তৃতার প্রথমেই সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান অভিষেক। তার পরে বলেন, “ বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। তাই এখানে আর মিথ্যাবাদী বিজেপি কিচ্ছু করতে পারবে না। ওরা সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ করাতে পারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনোদিন দুর্নীতির কাছে বশ্যতা স্বীকার করবেন না। তাই ধমকে চমকে ওনাকে আটকানো যাবে না। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, কংগ্রেসের সব নেতা হার স্বীকার করেছে ওদের দ্বিচারিতার কাছে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন সততার প্রতীক। তাই তিনি কখনও অন্যায়ের কাছে হার মানবেন না। আপনারা আজ শপথ নিন, ভোটবাক্সেই বুঝিয়ে দেবেন আপনারা আছেন মমতার পাশেই। দেশের একমাত্র জননেত্রীকেই আপনারা প্রধানমন্ত্রীর পদে দেখতে চান। পাঁচ বছর আগে হিন্দুধর্ম নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলেছিল ওরা। আর ক্ষমতায় এসে সব পাল্টে গেল। আমাদের অন্যতম ধার্মিক জায়গা বেলুড় মঠকে এতটুকুও সম্মান দেয়নি ওরা। খালি মুখেই মারিতং জগত”।
বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “আসছে ২৩ মে-র পরে ভারতীয় জনতা পার্টিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে এই নির্বাচনে বিজেপির কোনও অঙ্ক কাজ করবে না। যারা আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে ঠকায়, যাদের জন্যে সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়, তাঁদের আপনারা ফিরতে দেবেন না এটা আমার বিশ্বাস। ২০১৪ সালে আমরা যখন ভোটে লড়েছিলাম আমরা বলেছিলাম সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে”।
অভিষেক উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যারা প্রথম ভোট দেবেন তাঁদের বলছি আপনার জীবনের প্রথম ভোট বাংলার পক্ষে না বিপক্ষে? বাংলার সম্মানের পক্ষে নাকি বিপক্ষে? এরপরে একই প্রশ্ন তিনি মহিলাদেরও করেন। সবাই সমস্বরে তৃণমূলের কথা বলেন। তিনি বলেন, একটা ভোটও কেউ নকল ফুলে দেবেন না। মনে রাখবেন বাংলার মাটিতে একটাই ফুল, তা হল তৃণমূলের ঘাসফুল। এরপরে অভিষেক বলেন, “আমি ভয় পাইনা। আমি বারবার বলব নরেন্দ্র মোদী চোর”। তারপরেই জনগণ সমস্বরে বলতে থাকেন “গলি গলি মে শোর হ্যায়, চৌকিদার চোর হ্যায়”। অভিষেক আরও বলেন, “আজ এই সভা থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাদের ফিরতে হবে, তা হল আগামী ২৩ মে বিজেপিকে দেশছাড়া করবেন আপনারা। নতুন সরকার গঠনে আপনারা মমতার পাশে থাকবেন এটাই আমার বিশ্বাস”।
অভিষেক তারপরেই বলেন, “ মোদী বলেন উনি চা ওয়ালা যদিও ওনাকে কখনও চা বিক্রি করতে দেখিনি কিন্তু আমাদের নেত্রী আজও টালির ঘরে থেকে মানুষের জন্যে ভাবেন। মনে রাখবেন একমাত্র আমাদের নেত্রীই সবসময় সবার পাশে থাকেন। তাঁর সৌজন্যেই বাংলার মানুষ কন্যাশ্রী পেয়েছে, রুপশ্রী পেয়েছে, কৃষকবন্ধু পেয়েছে, রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ সব পেয়েছে। নেতাজী বলেছিলেন তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব এবার বাংলার অগ্নিকন্যা বলছেন তোমরা আমাকে ৪২-এ ৪২ দাও আমি তোমাদের ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারত দেব। ওরা পারেটা কি? সবসময় রাম নিয়ে রাজনীতি। কাল বাংলার মানুষকে একটা নববর্ষের শুভেচ্ছাও জানায়নি। ওরা আবার ভোট চায় কি করে? আপনারা ওদের প্রশ্ন করুন কালোটাকার নাম করে ওরা নোটবন্দী করেছে কার স্বার্থে? আমরা বার করব কার অ্যাকাউন্টে কত টাকা গেছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছোড়নেওয়ালা নেহি হ্যায়। উনি নিজেকে চৌকিদার বলেন কেমন চৌকিদার উনি যে নীরব মোদীরা এত টাকা নিয়ে পালিয়ে গেল? মনে রাখবেন একমাত্র তৃণমূলই সারাবছর মানুষের পাশে থাকে। ”
এখানেই না থেমে তিনি আরও জানান, “মোদীর তো এমন অবস্থা যে শেষে সেনার নামে ভোট চাইছেন।২০১৯, বিজেপি ফিনিশ। ২৩মে ওরা বুঝবে তৃণমূল কি জিনিস! লড়ছে মমতা দেখছে দেশ আগামী দু মাসে মোদী শেষ। ওরা বলে ভারতমাতা কি জয়, আমি বলব ভারতীয় জনতা পার্টির মনে ঢুকে গেছে ভয়, ভারতমাতা কি জয়, দাঙ্গার রাজনীতি আর নয়। এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে। তোমার রামের যাবার পালা, ব্যাগবস্তা গোছাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছে তেড়ে ঢপবাজরা পালাও।মনে রাখবেন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। আমার ভাইরা যারা এবারে প্রথম ভোট দেবে তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই থাকবে। আগামী ৩৩ দিন তোমরা আমাকে দাও আগামি ৫ বছরের সব কটা দিন আমি তোমাদের নামেই উৎসর্গ করব। জয় হোক তৃণমূল কংগ্রেসের। জয় হোক বাংলার”। আজকের নতুন ভোটারদের যে উচ্ছ্বাস দেখা গেল এই সভায় তা ফের প্রমাণ করে দিল মানুষ আছে মমতার পাশেই।