কোনও বাধা-নিষেধের পরোয়া না করে তাঁরা যে অস্ত্র নিয়েই রামনবমীর মিছিল করতে চান, গত শুক্রবারই তা জানিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু প্রশাসনও হাবেভাবে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিল যে অস্ত্র মিছিলের নামে সন্ত্রাস বরদাস্ত করা হবে না। সেই মতোই এবার রামনবমীর সশস্ত্র মিছিলে থাকায় বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রবিবার নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাল তৃণমূল। শনিবারের পরে রবিবারও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপির নেতা-কর্মী ও ভোট-প্রার্থীরা অস্ত্র হাতে রামনবমীর মিছিলে সামিল হন।
রবিবার জগদ্দলের ভাটপাড়ায় রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র হাতে দেখা গিয়েছে ব্যারাকপুর লোকসভার বিজেপি-প্রার্থী অর্জুন সিংহকে। হুগলির চুঁচুড়ায় তির-ধনুক হাতে নিয়ে মিছিলে পা মেলান হুগলির বিজেপি-প্রার্থী লকেট। গেরুয়া শিবিরের রায়গঞ্জের প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর হাতেও ছিল তরোয়াল। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আয়োজনে রায়গঞ্জের ওই মিছিলে এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র উপস্থিতিতেই বেশ কয়েকজন যুবকের হাতে অস্ত্র দেখা গিয়েছে। শনিবার গদা, তরোয়াল, লাঠি হাতে রামনবমীর মিছিলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও মেদিনীপুরের দলীয় প্রার্থী দিলীপ ঘোষ।
গলিতে লকেট অস্ত্র হাতে প্রচার শেষে বলেন, ‘হানাহানি-আঘাত নয়, অশুভ শক্তির বিনাশেই নীরাশক্তি হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।’ তাঁর ওই মিছিলে কিশোর-কিশোরী থেকে প্রবীণ সকলেরই হাতে ছিল অস্ত্র। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের নজরদারি ছিল। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার লকেটের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘অস্ত্র মিছিলের ছবি তুলে রাখা হয়েছে। আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রবিবাসরীয় ভোট-প্রচারে তৃণমূলও নানা সংগঠনের আয়োজনে রামনবমীর মিছিলে পা মেলায়। অবশ্য অস্ত্র নিয়ে নয়। কলকাতায় গিরিশ পার্ক এলাকায় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক স্মিতা বক্সী পা মেলান রামনবমীর একটি মিছিলে। লিলুয়াতেও এমন একটি মিছিলে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের পতাকা। ওই মিছিলে ছিলেন হাওড়ায় তৃণমূলের জেলা (শহর) সভাপতি অরূপ রায়। রায়গঞ্জে তৃণমূলের প্রার্থী কানাইয়ালাল অগ্রবালও যোগ দেন রামনবমীর মিছিলে। তৃণমূল রাজ্য জুড়ে রামনবমীর মিছিলে থাকলেও কোথাও অস্ত্র ছিল না বলে দলের তরফে দাবি করা হয়েছে। বিজেপির যে নেতারা অস্ত্র হাতে মিছিলে বেরিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাসক দল কমিশনে কোনও অভিযোগ জানাবে কি?
এ প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘বিজেপি কী ভাবে ভোটের মধ্যেও অস্ত্র হাতে মিছিল করছে, তা নিয়ে পদক্ষেপ করার কথা নির্বাচন কমিশনের। কমিশন নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন না করে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র হয়ে থাকলে কী করা যাবে! কমিশন কী ব্যবস্থা নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।’ তাঁর অভিযোগ, ‘কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। কমিশন তো শুধু বাংলার পুলিশ অফিসারদের বদলি করতেই ব্যস্ত! বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কী!’