বাঙালির কি গল্প কম পরিয়াছে?
আমরা নতুন গল্প বলতে ভুলে যাচ্ছি না তো? যেভাবে বকফুল ভাজা, লোডশেডিং এর ছায়াবাজি, ঘামাচি তাড়াতে বৃষ্টি আমাদের ভুলে গেছে।
থেকে গেছে লেখক খেদানো। শিল্প খেদানো। ছেলেধরা সন্দেহে অপ্রিয় মানুষকে গন প্যাদানো। অস্ত্র জুলুস। আর সেই এক গোছা সিরিয়াল।
হারমোনিয়াম ছাদ এ রোদ দেওয়া হত আচার এর বয়াম এর পাশে। তখন চৈত্র মাস ছিল। হালখাতার ক্যালেন্ডার ছিল ক্যাম্পাকোলার পাশে। জলযোগের প্যাকেটে ছিল দোকানের নাম।
যে মুসলিম ছেলেটা প্রতিবার ব্রাহ্মণী প্রেমিকাকে ট্রেনে ছাড়তে গিয়ে ফ্যলফ্যল করে তাকিয়ে থাকে ট্রেনটা মিলিয়ে না যাওয়া অবধি, তার জীবনে একটা নতুন গল্প আসুক। লভ জিহাদ বা ঘর ওয়াপসি নয়, সোহাগের গল্প।
যে বিচ্ছিরি গল্পগুলো রোজ নোটিফিকেশনে আসে, রাস্তার পিচে তাদের কবর দেওয়া হোক। কবর দেওয়া হোক হেডলাইটের আলোর দেখানো নগ্ন, চিৎকার করতে থাকা নারী শরীর, বিদ্বজনের রেপের বেসাতি। কবর দেওয়া হোক বুক নিক্ষেপ করে টিপ্পনী কলেজ থেকে বের হলে। নতুন গল্প লিখুক তোমার এসিডদগ্ধ গাল।
সেই চেনা রাজন্য, সেই ঘোষক, সেই সন্ধেবেলা খবরের কাঁটাছেড়া বদলে যাক । নতুন খবর রাজপথে আসুক। নতুন স্লোগান। দূরের কারখানার চিমনিতে ধোঁয়া, পাশের ক্ষেতের ফসল, উন্নয়ন এর সাইরেন।
নতুন কিছু চাইলেই নতুন করে তা পাওয়া যায় না। পুরোনো জিনিস নতুন মলাটে আসলে তাকেও আগুনে শোধন করা হয়। প্রতি বছর তৈরি হয় এক একটা বছর দিয়ে বানানো এক নৌকা। “শিপ ওফ থেসিয়াস”। কাঠের জায়গায় বছর এ পেরেক ঠুকে তৈরি এক নৌকা।
কাঠের মতো বছর ও নষ্ট হয়, পচন ধরে, তখন আর একটা বছর তাকে বদলে দেয়। দেওয়া উচিৎ। বছরের পিঠে নতুন বছর চেপে নৌকা বাওয়া। সকাল সব বদলে দেয়। ক্যলেন্ডার এর পাতার মত।
আমাদের একটা ধর্মনিরপেক্ষ উদযাপন আছে বৈশাখ এ। অনেক গল্প বলার আছে। রবীন্দ্রনাথ আছে, রাজশেখরের রামায়ণ আছে, লালন সাঁই আছে। আমরা কেন চাপাতি আর ত্রিশূলের ভয়ে ঘৃণা লালন করবো এ মানবজমিনে?
নববর্ষ জেগে থাকবে আমাদের- জানালার ঝিরিঝিরি রোদে, কৃষ্ণচূড়ায়, সবুজ ধানক্ষেতে, শুকিয়ে গেছে যে নদী বা মজে যাওয়া প্রাক্তন সম্পর্কে, অগোছালো শাড়ীর আঁচল-আস্ত একটা টিপে। ওটাই আমার মা, ওটাই মাতৃভূমি। ওর গল্পই বলে যেতে হবে।
নববর্ষ ধর্মতে নয়। জিরাফ এ বেঁচে থাক।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত