ধূলিধূসরিত রাস্তা থেকে দরজার সামনে মেলা জামাকাপড়, বসে থাকা কুকুরকে পেরিয়ে ছোট্ট দুকামরার ঘর। ব্রাহ্মণওয়াড়ায়। এখানেই থাকেন যশোদাবেন। হ্যাঁ পাঠক, আপনি ঠিক চিনেছেন, ইনিই মোদীর স্ত্রী।
ব্রাহ্মণওয়াড়ার এই বাড়িতেই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয় যশোদাবেনের, তখন তাঁর বয়স ১২। আর নরেন্দ্রর বছর ১৪। ৫০ বছর পর এখনও সেই বাড়িতেই থাকেন যশোদা। ঘর বাঁধার স্বপ্ন ছিল যশোদাবেনের, পরিস্থিতির ধারায় তা অন্য খাতে বইতে শুরু করেছিল। এখন ঘরের দেওয়ালের প্রতিটা ইঞ্চিতে দারিদ্রের ছাপ। পাল্লাহীন দেওয়াল-আলমারিতে জামাকাপড় গোঁজা। ইতিউতি ঝুলছে চিপস, মশলার নানাবিধ প্যাকেট। বাইরে বসে থাকা কুকুরটা রোদ্দুর চওড়া হওয়ায় একেবারে ঘরের ভিতর এসে সেঁধিয়েছে। এ সবের মধ্যেই খাটিয়ায় বসে যশোদাবেন। সবেমাত্র মন্দির থেকে এসেছেন।
পরনে খয়েরি রঙের শাড়ি। পাড়ের রংটা কোনও এক কালে সোনালি ছিল হয়ত! ঘিয়ে আঁচলটা ট্র্যাডিশনাল গুজরাতি স্টাইলে সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে আনা। দু’হাতে লাল রঙের পলার উপর পাথর বসানো। আলাদা ভাবে সরু পলাও রয়েছে। ডান হাতে লাল সুতো বাঁধা। তামাটে রঙের ফ্রেমের চশমা। কানে সোনার ছোট্ট টপ। কপালে মেরুন টিপ ঘিরে ছোট পাথরের সারি। তার ঠিক উপরেই যজ্ঞের লাল গোল তিলক-মন্দির থেকে এলেন যে। খাটিয়ায় বসে থাকা যশোদাবেনকে দেখে সাদামাটা শব্দটাও লজ্জা পাবে। মেহসানার উঞ্ঝায় বড় দাদা অশোকের কাছে থাকলেও, মাঝে মাঝেই বাপের বাড়িতে চলে আসেন যশোদা।
ভাইয়ের ছেলে জয় জানালেন, তাঁর পিসি পুজোআচ্চা আর উপোসের উপরেই থাকেন। উঞ্ঝা থেকে প্রায় প্রতি দিনই চলে আসেন ব্রাহ্মণওয়াড়ায়। জয়ের মায়ের সঙ্গে মন্দিরে যান। সেখানে পুজো সেরে বাড়ি ফিরে কোনও দিন খাওয়াদাওয়া করেন, আর যে দিন উপোস থাকে, সে দিন আর…।
কিছু কথাও হল যশোদাবেনের সঙ্গে। আপনি কি মন্দিরে নিয়মিত যান? ‘হ্যাঁ ওটাই তো জীবনে আছে। ভগবানকে ডাকি মনপ্রাণ দিয়ে,’- জবাব এল। কী বলেন ভগবানকে? ভীষণ হালকা স্বরে বললেন, ‘সবই ওঁর জন্য।’ ‘ওঁর জন্য মানে?’ একটা নীরব চাহনি দিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। জয়ের মা একটা জলভর্তি গ্লাস যশোদার হাতে ধরালেন। যশোদা কেমন ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে। তবে হাসিটা মুছে যায়নি একেবারেই।
আপনি উপোস করেন কেন? ‘সেকি আজ থেকে! কত্ত বছর হয়ে গেল। সপ্তাহে পাঁচ দিন উপোস থাকি। দু’দিন দু’বেলা খাই। বাকি দিনগুলো এক বেলা।’ কেন? এই বয়সে এত উপোস সহ্য হবে? হাসি-সহ জবাব এল, ‘কাটিয়ে তো দিলাম।’
হ্যাঁ, কেটেই গেল। যশোদাবেনের সুরে আমরাও বলি, ‘হরি দিন তো গেল, সন্ধ্যে হল, পার কর আমারে’।
