গত সপ্তাহের ঘটনা। কর্ণাটকের চিত্রদুর্গে সবেমাত্র এসে পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টার। তখনও নামেননি মোদী। দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রীর নামার তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা একটি ‘রহস্যজনক’ কালো ট্রাঙ্ক তড়িঘড়ি হেলিকপ্টার থেকে নামিয়ে একটি গোপন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। মোদীর হেলিকপ্টার থেকে নামানো ওই রহস্যজনক কালো ট্রাঙ্কটি নিয়েই এখন সরগরম রাজধানীর রাজনীতি। কর্ণাটকের চিত্রদুর্গে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়া নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ হেলিকপ্টার থেকে নামা ট্রাঙ্কে কী ছিল? এই প্রশ্নই তুলেছে কংগ্রেস-সহ দেশের বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে ও’দিনের ঘটনার তদন্তের আর্জি জানিয়েছে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীরও বক্তব্য জানতে চেয়েছেন কংগ্রেস মুখপাত্র আনন্দ শর্মা। ট্রাঙ্কের ভিতরে কী ছিল, মোদীর কাছে তা জানতে চেয়েছেন তিনি।
বিতর্কের সূত্রপাত গত সপ্তাহে। গত ৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার কর্ণাটকের চিত্রদুর্গ জেলার বিডি রোডে সায়েন্স কলেজের মাঠে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানে তাঁর হেলিকপ্টার থেকে একটি কালো রঙের ট্রাঙ্ক তড়িঘড়ি নামানো হয় বলে অভিযোগ। প্রমাণ হিসেবে শনিবার নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করেন কর্ণাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দীনেশ গুন্ডু রাও। সেই ভিডিওয় প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার থেকে একটি কালো রঙের ট্রাঙ্ক নামাতে দেখা যায় কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষীকে। দৌড়তে দৌড়তে সেটি নিয়ে গিয়ে একটি ইনোভা গাড়িতে তুলতে দেখা যায় তাঁদের। গাড়িটি সঙ্গে সঙ্গে রওনা হয়ে যায়। টুইটারে ভিডিয়োটি পোস্ট করে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করে দীনেশ লেখেন, ‘চিত্রদুর্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর হেলিকপ্টার থেকে রহস্যজনক বাক্স নামানো হল। নিমেষের মধ্যে সেটি নিয়ে উধাও হয়ে গেল একটি বেসরকারি ইনোভায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত কমিশনের। বাক্সে কী রাখা ছিল, গাড়িটাই বা কার, সব কিছু তদন্ত করে দেখা হোক।’
প্রসঙ্গত, বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাতে রাহুল গান্ধীর দলের আক্রমণ, ‘ট্রাঙ্ক যদি নামলই, তবে তা প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষমান এসপিজি কনভয়ের কোনও গাড়িতে উঠল না কেন? কেনই বা তা দূরে দাঁড়ানো একটি ইনোভা গাড়িতে তোলা হল? আর ট্রাঙ্ক তুলেই দ্রুতগতিতে কোথায় গেল গাড়িটি? তাহলে কি ওই বাক্সে টাকা ছিল?’ রবিবার কংগ্রেস মুখপাত্র তথা রাজ্যসভায় দলের ডেপুটি চেয়ারম্যান আনন্দ শর্মা দাবি করেন, ‘আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু থাকাকালীন এ ধরনের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে তদন্ত করতে হবে।’ উল্লেখ্য, ১০ মার্চ ঘোষণা হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ। সেদিন থেকেই লাগু হয়ে গেছে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি। তা চলবে আগামী ২৩ মে ভোটের ফল ঘোষণার দিন পর্যন্ত। এই সময়কালের মধ্যে গোটা দেশে কোথায় কোনও বেআইনি কিছু ঘটছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব কমিশনের। সর্বত্র নজরদারি টিম রয়েছে। তারই মধ্যে কী করে ওই রহস্যময় ট্রাঙ্ক খোদ প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার থেকে নেমে মুহূর্তের মধ্যে গায়ের হয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আনন্দ।
তাঁর প্রশ্ন, ‘কী ছিল ওই ট্রাঙ্কে? টাকা? নাকি অন্য কিছু?’ আনন্দের দাবি, ‘প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টারের সঙ্গে তিনটি চপার ছিল। নিরাপত্তার কারণেই ওই চপার। সেসব নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রহস্যজনক ট্রাঙ্ক নামল এবং তা দূরে দাঁড়ান গাড়িতে করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হল। সেটা কী? কারণ, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু হলে তা তো কনভয়ের সঙ্গেই যাবে। ট্রাঙ্কটি প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের সঙ্গে না যাওয়াটাই সন্দেহজনক। তবে কি হিসেব বহির্ভূত কোনও কিছু পাচার হল? ওই ট্রাঙ্কে কী ছিল তা নিয়ে কমিশনকে তদন্ত করতে হবে।’ রবিবার গোটা বিষয়টি নিয়ে দিল্লীতে সরব হতে দেখা যায় কংগ্রেসের এই প্রবীণ নেতাকে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কর্ণাটকের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে দিল্লীতে কমিশনেরও দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা করছে রহুলের দল। শুধু তাই নয়। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে ইতিমধ্যেই কয়েকশো কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। তাই নেটিজেনদের একাংশের ধারণা, মোদীর ওই কালো ট্রাঙ্কেও থাকতে পারে কালো টাকা।