শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই নয়, জুমলাবাজি করা এখন বিজেপির প্রায় প্রতিটি নেতা-নেত্রীরই অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। ‘আচ্ছে দিনে’ মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন গোটা গেরুয়া শিবির। এবার জানা গেল, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটেয় এসেও কথা দিয়ে কথা রাখেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গােয়েল। যে কারণে রায়নার মানুষ এবার একটিও ভোট দেবে না বিজেপিকে। এমনই দাবি বিপ্লবীর জন্মস্থান সুবলদহ গ্রামের বাসিন্দাদের। কিন্তু তাঁরা জানাচ্ছেন, একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দেশবরেণ্য এই নায়কের জন্মস্থান সংরক্ষণের কথা খেয়াল রেখেছেন। এখানকার উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্বভাবতই স্বাধীনতার ৭২ বছর পর রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগে খুশি গ্রামবাসীরা।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মনসুর রহমান জানান, ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট বিজেপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী পীযূষ গোয়েল দেশব্যাপী ‘তিরঙ্গা যাত্রা’র অঙ্গ হিসেবে বিপ্লবী রাসবিহারি বসুর জন্মস্থান এই সুবলদহ গ্রামে এসেছিলেন। এখানে এসে এক অনুষ্ঠানে বিশ্বের দরবারে এই সুবলদহ গ্রামকে তুলে ধরা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, সেদিন বিপ্লবীর জন্মভিটেয় গিয়ে তুলসী মঞ্চের মাটি মাথায় মেখে পীযূষ কথা দিয়েছিলেন, আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতা সংগ্রামী রাসবিহারী বসুর জন্মস্থান দত্তক নিয়ে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু একটি কথাও আজ পর্যন্ত তিনি রাখেননি। সেসব এখন মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বন্যায় পরিণত হয়েছে। যে দলের মন্ত্রী সাধারণ মানুষকে কথা দিয়ে কথা রাখেন না, সেই দলকে মানুষ বিশ্বাস করবে কী করে? তাই এই গ্রামের মানুষও বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে বর্ধমান জেলা পরিষদের অন্যতম সদস্য তথা
তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, শুনেছিলাম, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটেয় এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছিলেন। কিন্তু তিনি তার কিছুই পূরণ করেননি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্য সরকার পর্যটন দফতরের পক্ষ থেকে এই দেশনায়কের জন্মভিটে সংরক্ষণের জন্য প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। সেই সংরক্ষণের কাজ চলছে। পাশাপাশি জন্মভিটে থেকে পাকা রাস্তা করার জন্য প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকার কাজ শুরু হয়েছে। স্বভাবতই যারা কথা দিয়ে কথা রাখে না, তাদের পাশে মানুষ থাকবেনা। আর যারা সব সময়ের জন্য মানুষের পাশে রয়েছেন, সাধারণ মানুষও তাদের পাশেই থাকবেন। ওই এলাকার একটি ভােটও বিজেপি পাবে না বলেই দাবি করেছেন তিনি।
পূর্ব বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর এলাকায় রায়না বিধানসভা একসময় বামপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে রায়নাতেও পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছিল। বাম সরকারের ভুল-ভ্রান্তি এখানকার মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও এখানকার মানুষ কে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করায় ক্ষুব্ধ রায়নার মানুষ। চরম অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা বিজেপিও। অন্যদিকে, তৃণমূল সরকারের উন্নয়নমূলক নানা প্রকল্প মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গেছে। পাশাপাশি কৃষি প্রধান এই অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসায় রায়নার মানুষ একের পর এক পঞ্চায়েত নির্বাচন, বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মমতার নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইতিমধ্যেই সেখানকার মানুষ তৃণমূলের প্রচার, মিছিল ও জনসভায় অংশ নিচ্ছেন।