‘জীবনী ভিত্তিক’ আর ‘জীবন থেকে অনুপ্রাণিত’ কথা দুটির মধ্যে যে বিস্তর ফারাক রয়েছে, তা বুঝতে পারেননি বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাইয়েরা। এবং তাই বাংলা ছবি ‘বাঘিনী’র বিরুদ্ধে এবার অহেতুক নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলছে সিপিএম। তাদের দাবি, ‘বাঘিনী’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বায়োপিক’। তাই মুক্তির আগেই আটকাতে হবে এই ছবিকে।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘বাঘিনী’ ছবির ট্রেলার। যাতে দেখা যাচ্ছে এক জননেত্রীর উত্থান। ছবিটি যে কোনও মতেই মুখ্যমন্ত্রীর বায়োপিক নয়, তা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন ছবি নির্মাতারা। বরং এই ছবিটিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত বলে জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তাতে কী? কমিশন যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বায়োপিক ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’র মুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছেন, বাঘিনী-র ক্ষেত্রেও তেমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি তুলে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছে সিপিএম। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর বায়োপিক এর ট্রেলার এর প্রদর্শন নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। সেই কারণেই অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী বারবারই এই দাবি করে এসেছেন যে রাম-বাম এখন এক হয়ে গেছে। এ দাবি যে একেবারেই ভ্রান্ত নয়, তার প্রমাণ মিলেছে গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য রাজনীতিতে ঘটে চলা একাধিক ঘটনায়। আসলে ‘বন্ধু’ রামের ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’র মুক্তি আটকে যাওয়াটাকে মোটেই ভাল ভাবে নিচ্ছে না বামেরা। তার ফলেই ‘বাঘিনী’কে মমতার বায়োপিক বলে প্রচার চালিয়ে ভোট মরশুমে এ ছবির মুক্তি আটকে দেওয়ার চেষ্টায় উঠেপড়ে লেগেছে কমরেডরা। আসলে ভোটের মুখে এ ছবি মুক্তি পেলে যে তাদের বেশ ভাল রকমের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে, তা আগে থেকেই টের পাচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কারণ ছবির ট্রেলারে দেখা গেছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নির্দেশে মমতাকে মারধর করে মহাকরণ থেকে বের করে দেওয়ার মতোই হুবহু একই ঘটনা ঘটছে ছবির মূল চরিত্রের জীবনেও।
ছবির পরিচালক নেহাল দত্ত জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে গবেষণার পর এই ছবিটি তৈরি হয়েছে। এতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাগুলি তুলে ধরা হলেও, ছবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামের কোনও চরিত্রই নেই। রয়েছে ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়, এই ছবির মুখ্য চরিত্র। দক্ষিণ কলকাতার এক নিম্নবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ মেয়ে কী ভাবে লড়াইয়ের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অধিকার করে নিলেন, ছবিতে সেটাই দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক। প্রশ্ন উঠছে, যেখানে ছবির মূল চরিত্রের নাম ইন্দিরা, সেখানে কী করে একে মমতার বায়োপিক বলছেন সিপিএম নেতৃত্ব? তবে এর কোনও ঠিকঠাক উত্তরই নেই ইয়েচুরিদের কাছে।