উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের একটি ভিডিও মাত্র ছ’দিন আগে নজরে এসেছে। এই ভোট-বাজারে সেই ভিডিও ভাইরাল হতে ছ’ঘণ্টাও সময় লাগেনি। আধুনিক উড়িষ্যার রূপকার বিজু পট্টনায়েকের পুত্র নবীন পট্টনায়েক। তিনি সেই বিরল প্রজাতির রাজনীতিবিদ, যিনি সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে পেরেছেন। কিন্তু এখন ফিসফাস, গুনগুনের শিকার হচ্ছেন। চায়ের কাপের মুখরোচক আড্ডায় বলা হচ্ছে, ভাল প্রশাসক, কিন্তু খুব ‘আনইন্টারেস্টিং’। কিন্তু তাঁর হাতে ২০ বছর একটানা শাসনভার সঁপে দিয়ে উড়িষ্যাবাসী নিশ্চিন্তে ছিলেন। কিন্তু পর্যায়ের ভোট শুরুর মাত্র ৫ দিন আগে তড়িঘড়ি ভিডিও রিলিজের হুকুম দিলেন।
উড়িষ্যায় এবার একসঙ্গে লোকসভা–বিধানসভার ভোট। এ শুধু উড়িষ্যার কুর্সি দখলের লড়াই নয়, দিল্লী-র মসনদে কে বসবেন, তা নির্ণয় করারও লড়াই। জাতীয় রাজনীতির এই টালমাটাল অবস্থায় সে সুযোগ কেউই হাতছাড়া করতে চাইছেন না। ঠিক এই সময়েই নবীনকে ঘিরে উড়িষ্যা জুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমনকী, নবীনের হাতে গড়া বিজু জনতা দলেও নীচুতলায় ফিসফাস চলছে— নবীন কি অসুস্থ? তিনি কি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না? তাঁর কি হাত কাঁপে? তিনি কি কানে ভাল শুনতে পাচ্ছেন না? দলের সুপ্রিমোর কানেও ফিসফিসানির খবর পৌঁছেছে। আর এই ভোটের মুখে তিনি এই ভিডিও শেয়ার করে সব গুঞ্জনের জবাব দিয়েছেন।
এই ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, নবীন–নিবাসে মুখ্যমন্ত্রী কালো টি শার্ট–ট্র্যাকপ্যান্ট পরে শারীরিক কসরত করছেন। প্রথমে করছেন জগিং। জগিংয়ের পর তিনি হাত, পা, পিঠ–কোমরের নানা ব্যায়াম করছেন। সবশেষে তিনি বলছেন, ‘ফিট শরীর নিয়ে এবার আমি রেডি।’ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরও নবীনকে ঘিরে গুঞ্জনের সবটা চাপা দেওয়া যায়নি। আবার কথা উঠেছে, ‘ভগ্নস্বাস্থ্য’ নিয়ে তিনি আরও পাঁচ বছর চালাতে পারবেন? পারবেন বিজেপি–র মোকাবিলা করতে? ভুবনেশ্বরে কান পাতলেই শোনা যাবে এইসব প্রশ্ন।
কিন্তু নবীন পট্টনায়েক তো আর পাঁচজনের মতো নন। এর আগে রাজনীতি তাঁর মতো কমকথার মানুষ পায়নি। গত লোকসভায় ২১–এ ২০, বিধানসভায় ১৪৭–এ ১১৭। বাবার ওম থেকে বেরিয়ে তিনি উড়িষ্যাকে গড়েছেন। সুনামি, ফাইলিন আছড়ে পড়লেও উড়িষ্যা উঠে দাঁড়িয়েছে।
তিনি এখন ৭৩। নক্ষত্রখচিত জীবন ছেড়ে, সব গ্ল্যামার বিসর্জন দিয়ে রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন। ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরের কাছে বাবার তৈরি নবীন-নিবাসই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। দলের সঙ্গে বাবার নাম জুড়ে থাকায় প্রথম নির্বাচনেই ছক্কা। নবীন এবার বিধানসভার দুই কেন্দ্রে প্রার্থী। নিজের চিরাচরিত হিঞ্জিলির সঙ্গেই পশ্চিম উড়িষ্যার বিজেপুরেও। তাঁর উন্নয়নের ধারা সবাই জানে, কিন্তু ফিসফাসের মুখে পড়েই এই ভিডিওর মাধ্যমে জবাব দিলেন তিনি।