এই মুহূর্তে গোটা দেশ জুড়েই বইছে বিজেপি বিরোধী হাওয়া। আর বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ৯১ আসনের এ কথা ভোটেই স্পষ্ট যে গত বারের ‘মোদী লহর’ আর এবারের ভোটে নেই। এবার ইস্যু কৃষি, পুলওয়ামা, বালাকোট, রাফাল, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব। শোনা যাচ্ছে, প্রথম পর্বের ভোটে গত বারের তুলনায় অর্ধেকের নীচে নেমে যেতে পারে বিজেপি। এর মধ্যে জমুইয়ের প্রার্থী চিরাগ পাসোয়ান বলেন, জোটের লোকেরাই তাঁর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত করেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘যেখানে জল কম, সেখানেই নৌকো আটকে যায়।’
লোক জনশক্তি পার্টির নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলেই যদি এমন অভিযোগ করেন, তা হলে বুঝতেই হবে, বিহারে প্রথম দফার ভোটে মোটেই ভাল জায়গায় নেই এনডিএ। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ৯১ আসনের মধ্যে বিজেপির হাতে ছিল ৩২টি। কংগ্রেসের ৭। বাকি অন্যদের। তবে সেই ৩২ আসন থেকে বিজেপি এবার নেমে আসতে পারে ১৪তে। বাড়বে কংগ্রেস-সহ উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মহাজোট। কীভাবে? পরিসংখ্যান বলছে, গত বার ৯১ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৭টি আসন জিতলেও, দ্বিতীয় স্থানে ছিল ৪১টি কেন্দ্রে। আবার বিজেপি ৩২ আসন জিতলেও, দ্বিতীয় স্থানে ছিল ৬টি কেন্দ্রে।
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যেতে পারে উত্তরপ্রদেশে। রাজ্যের যে ৮টি আসনে গতকাল ভোটগ্রহণ হয়েছে, গত বার তার সব ক’টিই ছিল বিজেপির হাতে। এবার ৬টি আসন হারাতে পারে বিজেপি। যেমন গৌতম বুদ্ধ নগরের প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মহেশ শর্মাকে কোণঠাসা করেছেন মহাজোটের প্রার্থী সতবীর নাগর। মেরঠ, বাগপত, কৈরানা, মুজফফরনগর, বিজনোর ও সাহরনপুরও ছিনিয়ে নিতে পারেন মহাজোটের প্রার্থীরা। আবার বিহারে যে ৪টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে বিজেপির জেতা ২টি কেন্দ্র দল এবার রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে। এই দুটি আসন রামবিলাস ধরে রাখবেন, দিল্লীর নেতারা এমনটা মনে করছেন না।
ঔরঙ্গাবাদে বিজেপি প্রার্থী সুশীলকুমার সিংকে কড়া টক্কর দিয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী। ঔরঙ্গাবাদ ও গয়ায় জিতনরাম মাঝি এনডিএ শরিক জেডি(ইউ) প্রার্থী বিজয় মাঝিকে হারাবেন বলে মনে হচ্ছে। সবর্ণদের ভোট তাঁর বাড়তি পাওনা হতে পারে। ভূমিহারাদের ক্ষোভ বিজেপিকে ডুবিয়ে দিতে পারে। মহারাষ্ট্রে ৭টি আসনে ভোট হয়েছে। ৭টিই বিজেপির ছিল। নাগপুর, রামটেক, ওয়ার্ধা, ভান্ডারা-গোন্ডিয়া, ইয়বতমাল-ওয়াশিম, গড়চিরোলি-চিমুর এবং চন্দ্রপুর। নাগপুরে কেন্দ্রের প্রভাবশালী মন্ত্রী নীতিন গাডকরির জয়ের পথ মোটেও মসৃণ নয়।
দিল্লীতে দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিজেপি নেতাদের কানাঘুষো, এই কেন্দ্রে বিজেপির পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ডিএমকে ফ্যাক্টর’। যা হল দলিত, মুসলিম ও কুনবি। গাডকরি ২০১৪ সালে এখানে প্রায় ৩ লক্ষ ভোটে জিতেছিলেন। তবে এবার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের নানা পাটোলে। লড়াকু নেতা। কুনবি ভোটারদের পছন্দের। ভান্ডারা-গোন্ডিয়ায় নানা পাটোলে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। পরে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। হারিয়েছিলেন এনসিপি-র প্রফুল প্যাটেলকে। এই কেন্দ্রটি শারদ পাওয়ারের গড় হিসেবে পরিচিত। এবার এই কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নিতে পারে এনসিপি। উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিল এনসিপিই।
বৃহস্পতিবার উত্তরাখণ্ডের ৫টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। হরিদ্বার, নৈনিতাল, আলমোড়া, তেহরি গাড়োয়াল এবং গাড়োয়ালে। ২০১৪-তে সব ক’টিই বিজেপির দখলে ছিল। এবার নৈনিতাল থেকে লড়ছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরীশ রাওয়াত। তাঁর জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত কংগ্রেস। আর প্রথম দফায় আসামে যে ৫টি আসনে নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে জোরহাট, ডিব্রুগড়, লখিমপুর ও তেজপুর— এই ৪টি আসন ছিল বিজেপির দখলে। কংগ্রেসের হাতে ছিল কালিয়াবর। বিজেপি ও কংগ্রেস দু’দলের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল এবার পুরনো সব হিসেব বদলে দিতে পারে।
ওড়িশায় ভোট হয়েছে কোরাপুট, নবরংপুর, কালাহান্ডি ও বেহরামপুরে। সবকটি আসনই ছিল বিজু জনতা দলের। এবার নবীন পট্টনায়ক সব আসনেই প্রার্থী বদলেছেন। বিজেপি এবারও দাঁত ফোটাতে পারবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সবমিলিয়ে অবস্থা এখন এমনই যে, নিশ্চিন্তে নেই গেরুয়া শিবির। ২০১৪-য় ‘মোদী লহর’-এ বিজেপি ক্ষমতায় এলেও এবার জোর সম্ভাবনা পদ্মের ভরাডুবির।