বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট ভেস্তে গিয়েছে। জোট ভাঙার জন্য দুপক্ষই একে-অপরকে দোষারোপ করছে। কটূ-কাটব্যও বাদ যাচ্ছে না। কিন্তু বহরমপুরের চিত্রটা পুরোই আলাদা। সেখানে বাম কর্মী-সমর্থকদের আচরণে জোট ভেঙেছে মালুম হবার জো নেই। দিব্যি কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে বামফ্রন্টের কর্মীরা লড়ে যাচ্ছেন। কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরির হয়ে লাল ঝাণ্ডা কাঁধে জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা।
বহরমপুরের কান্দিতে বামফ্রন্টের ব্যানারে বিরাট মিছিল আয়োজন করা হয়েছিল। লাল ঝাণ্ডা কাঁধে মিছিলে হাটলেন কয়েকশো বাম কর্মী-সমর্থক। আর সেই মিছিল থেকে অধীর চৌধুরিকে জেতাতে হাত চিহ্নে ভোট দেওয়ার জন্য স্লোগান উঠল মুহুর্মুহু।
বামফ্রন্ট আগেই বলেছিল বহরমপুর ও দক্ষিণ মালদহে তারা প্রার্থী দেবে না। রাজ্য বামফ্রন্টেও সেই সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছিল। এমনিতে বহরমপুর আসন বাম শরিক আরএসপি-র ভাগের। সেখানে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দল ঈদ মহম্মদকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ক্ষিতি গোস্বামী গিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে হাত তুলে সূর্য মিশ্র, বিমান বসুদের বলে দিয়েছেন, জেলা আরএসপি কোনও কথা শুনছে না। তিনি নিরুপায়। দুদিন আগেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক দলীয় মুখপত্রে বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘বহরমপুরে ফ্রন্টের কোনও প্রর্থী নেই’। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ভোটের দিনগুলিতে কি করবে বাম প্রার্থীরা? হাত গুটিয়ে বসে থাকবে?
সেই উত্তরই পাওয়া গেল কান্দি সিপিএমের মিছিলে। যেখানে লাল ঝাণ্ডা কাঁধে হাত চিহ্নে ভোট দেওয়ার আবেদন জানানো হল। স্পষ্ট বোঝা গেল, বহরমপুরে বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গেই আছে। কেরালার ওয়ানাড কেন্দ্রে প্রার্থী হবার জন্য রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রকাশ কারাত যতই ‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে কংগ্রেসকে হারাব’ বলুন, তলে তলে তাঁরা একসঙ্গেই আছেন।
এখন কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে বামেদের এই মিছিলের ফল কী হতে পারে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে দুটি ঘটনা ঘটল। এক, আরএসপি প্রার্থীকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল সিপিএম। বুঝিয়ে দিল ইদ মহম্মদ ফ্রন্টের প্রার্থী নন। এতে ফ্রন্টের ফাটল আরও চওড়া হল। প্রকাশ্যে এল। কারণ, অধীরের সমর্থনে মিছিল করে কার্যত সিপিএম ফ্রন্ট শরিকের প্রার্থীকে হারাতে চাইলেন। এবং দুই, বাম-কংগ্রেসের গোপন আঁতাত বেআব্রু হয়ে গেল। এখন প্রকাশ কারাতরা যতই রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে সুর চড়াক না কেন, সেটা যে লোক দেখানো তা মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল।