আজ বনগাঁ লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুরের সমর্থনে বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত বনগাঁ উত্তরের গোপালনগর হরিপদ ইন্সটিটিউশনে জনসভা করলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সভামঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তিনি। নিশ্চিত ভাবে জানিয়ে দিলেন আগামী ২৩ মে বাংলা ছাড়া হবে বিজেপি।
আজকের তীব্র রোদ উপেক্ষা করে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন এই সভায় তাঁদের সকলকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানান তিনি। আজকের সভায় মহিলাদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। তাই দেখে অভিষেক বলেন, “যাঁদের সঙ্গে নারীশক্তি থাকে তাঁদের কোনও অশুভ শক্তি আটকাতে পারে না। সন্ধ্যাবেলায়, বিকালে সভা হলে মানুষ সভায় আসেন। কিন্তু দুপুরের এই চড়া রোদকে উপেক্ষা করে যারা এসেছেন তাঁরা বক্তৃতা শুনতে নয়, সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন আগামী ৬ তারিখ ভারতীয় বিজেপিকে বাংলা ছাড়া, ভারত ছাড়া করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক ঐক্যবদ্ধ ধর্ম নিরপেক্ষ ভারত গড়ে তুলবেন”।
সভামঞ্চ থেকে তিনি বলেন, “আজকের এই সভা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ ধন্যা প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুরের সমর্থনে। তিনি দ্বিতীয় বারের জন্যে প্রার্থী হয়েছেন। আমি জানি আপনাদের দাবিদাওয়া নিয়ে তিনি যাতে আবারও সংসদে উপস্থিত হতে পারেন তাই আপনারা তাঁকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন। ৬ তারিখ ভোট, ৪ তারিখ পর্যন্ত প্রচার চলবে। আর মাত্র ২০ দিন। আমাদের এমন ভাবে লড়তে হবে এই কটা দিন যাতে বিজেপির কোনও নেতা আর মানুষকে বিভ্রান্ত না করতে পারে। ওরা অনেক বড় বড় কথা বলেছে, কাজে কিচ্ছু করেনি। আমার স্থির বিশ্বাস আপানারা ওদের আর ফেরত আনবেন না”।
এরপরে বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “আসছে ২৩ মে-র পরে ভারতীয় জনতা পার্টিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে এই নির্বাচনে বিজেপির কোনও অঙ্ক কাজ করবে না। যারা আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে ঠকায়, যাদের জন্যে সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়, তাঁদের আপনারা ফিরতে দেবেন না এটা আমার বিশ্বাস। ২০১৪ সালে আমরা যখন ভোটে লড়েছিলাম আমরা বলেছিলাম সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে”।
এরপরে ক্ষোভ উগড়ে তিনি বলেন, “তৃণমূলই শীত গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে মানুষের পাশে থাকে। বিজেপির টিকি পাওয়া যায় না। কারোর বাড়িতে কোনও সমস্যা হলে তৃণমূলের ছেলেটাই যায়। বিজেপিকে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয়। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, গতিধারা, কৃষকবন্ধু সবকিছুতেই তৃণমূল। কোথায় থাকে বিজেপি তখন? যারা নোটবন্দীর নামে মানুষকে হয়রানি করে তাঁরা মানুষের পাশে থাকতে পারে না। ওরা তো ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু একমাত্র তৃণমূলই সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী। আমাদের নেত্রী শিখিয়েছেন এটাই যে ধর্ম নিয়ে কখনও রাজনীতি হয় না। আর বিজেপি সেটাই করে। কিন্তু এইবার বাংলার মাটিতে আর তা চলবে না।
তিনি আরও বলেন, “ মোদী এখানে সভা করে গেছিল, কিন্তু ওদের এমনই দুরবস্থা যে হরিচাঁদ ঠাকুরকে হরিশচন্দ্র ঠাকুর বলেছে। মতুয়া সমাজকে বলেছে ‘মাতুয়া সমাজ’। এমনই দুর্দশা যে সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছে তাঁদের নামটাও জানে না! এরা নাকি মানুষের জন্যে ভাবে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা যা করেছেন মতুয়াদের জন্যে তা করে দেখাক! রেলস্টেশন থেকে শুরু করে রাস্তা সবটা করেছেন। হরিচাঁদ ঠাকুরদের সম্মান জানিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলছে। আমরা সমস্ত উৎসবে ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবে সবার পাশে থাকি। যারা ভেদাভেদের রাজনীতিতেই ব্যস্ত থাকে তাঁদের থেকে অন্তত আমাদের সংহতি শিখতে হবে না”।
এরপরে তিনি বলেন, “আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না। তবে আজ বলে যাচ্ছি কেন্দ্রে যদি মমতার নেতৃত্বে সরকার স্থাপন হয় তাহলে বড়মাকে আমরা সর্ব শ্রেষ্ঠ সম্মানে পূজিত করব। ওরা মানুষের জন্যে করেছেটা কি? যারা হিন্দু ধর্ম বিক্রি করে রাজনীতি করে তাঁরা কখনই কোন কিছু করতে পারেনা। মানুষের জন্যে উন্নয়ন যদি কেউ করে থাকে তা হল আমাদের নেত্রী। আর ওরা মিথ্যে কথা বলে ৫ বছর কাটিয়ে দিল। মোদী নিজেক চা ওয়ালা বললেও তাঁকে চা বিক্রি করতে দেখিনি কিন্তু আমাদের নেত্রী আজও টালির ঘরে থেকে মানুষের কথা ভাবেন। এখানেই মিথ্যাবাদী মোদী এবং বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্থক্য”।
এরপরে জিএসটি, নোটবন্দী, গ্যাসের দামবৃদ্ধি নিয়েও কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন যারা মানুষের কথা ভাবেন না তাঁদের রাজনীতির ময়দানে থাকা উচিৎ না। ওরা এতটাই নির্লজ্জ যে সেনাকে সামনে রেখে ভোট চায়। বিজেপির ফ্ল্যাগ লাগানোর লোক পর্যন্ত নেই, খালি মুখেই মারিতং জগত। অন্যদিকে আমাদের নেত্রী যা যা বলেছেন তার সব করে দিয়েছেন। ভোট মিটলে ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। থেকে যাবেন শুধু মমতাই। তাই বন্যা দুর্গত অঞ্চলে একমাত্র মমতাই এক হাঁটু জলে নেম পরিদর্শন করতে গেছেন। আর মোদীর তো এমন অবস্থা যে শেষে সেনার নামে ভোট চাইছেন।২০১৯, বিজেপি ফিনিশ। ২৩মে ওরা বুঝবে তৃণমূল কি জিনিস! লড়ছে মমতা দেখছে দেশ আগামী দু মাসে মোদী শেষ। ওরা বলে ভারতমাতা কি জয়, আমি বলব ভারতীয় জনতা পার্টির মনে ঢুকে গেছে ভয়, ভারতমাতা কি জয়, দাঙ্গার রাজনীতি আর নয়। এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে।মনে রাখেবন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। জয় হোক বাংলার”। আজকের সভার এই বিপুল উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিল মানুষ রয়েছে মমতার পাশেই।