তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাতুরে একসময় ৫০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ছিল। তাঁরা তাঁত বস্ত্র, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও সোনার গয়না তৈরি করত। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে জিএসটি চালু হতেই বিপদে পড়ে যায় সেই ৫০ হাজার মানুষ। সেখানের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ৪০ শতাংশ বন্ধও হয়ে যায়। সেই কোয়েম্বাতুরে ভোট প্রচারে এসেই এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, চৌকিদার আপনাদের শহরের সমৃদ্ধি নষ্ট হতে দেয়নি। যা শুনে ক্ষোভ উগড়ে দিল সেখানকার মানুষ।
প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ুতে নির্বাচনী সফরে গিয়ে কোয়েম্বাতুরেই প্রথম জনসভা করেন মোদী। তবে সেখানে তিনি যা যা দাবি করলেন তাঁর ভাষণে, কোয়েম্বাতুরের মানুষ তা শুনে আদৌ খুশি হননি। কারণ ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের জন্যই ওই শহরটি একসময় বিখ্যাত ছিল। কিন্তু মোদী সরকারের দু’টি পদক্ষেপ, নোটবন্দী ও জিএসটিতে কোয়েম্বাতুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিবকুমার নামে কোয়েম্বাতুরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তিনি একসময় একটি ছোট কারখানার মালিক ছিলেন। তাঁর কারখানায় মোটর পাম্পের যন্ত্রাংশ তৈরি হত। এখন সেই কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি এখন কোয়েম্বাতুর হাসপাতালে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেন। বেতন পান ৮ হাজার টাকা। আগে কারখানার মালিক হিসাবে রোজগার করতেন তার তিনগুণ।
৪১ বছরের শিবকুমার এমন দূরাবস্থায় পড়লেন কেন? তিনি জানিয়েছেন, ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি চালু হওয়ার পরে তাঁর ব্যবসা উঠে যায়। এখন বিজেপি প্রার্থী বলছেন, জিএসটির হার পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। শিবকুমার তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার ভক্ত। তিনি বলেছেন, আমি আম্মাকে মিস করি। আমি আগামী দিনেও এআইএডিএমকে-কে সমর্থন করে যাব। তাঁর প্রশ্ন, আমি কীভাবে বিজেপিকে সমর্থন করতে পারি? তাদের জন্য আমার মতো বহু মানুষের ব্যবসা শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ুতে এআইডিএমকে-র সঙ্গে জোট বেঁধেছে বিজেপি। তার বিরোধী ডিএমকে-র সঙ্গে জোট হয়েছে কংগ্রেস ও বামেদের। রাজ্যে ভোট হবে ১৮ এপ্রিল।
উল্লেখ্য, কোয়েম্বাতুরে বরাবর এডিএমকে অথবা ডিএমকে-র কোনও প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। ২০১৪ সালে জয়ললিতা ছিলেন মোদীর বিপক্ষে। তামিলনাড়ুর ভোটারদের বলা হয়েছিল, মোদী অথবা ‘লেডি’, দু’জনের একজনকে বেছে নিতে হবে। ওই স্লোগান দিয়ে তামিলনাড়ুতে বিপুল জয়লাভ করেন জয়ললিতা। রাজ্যের ৩৯ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৭ টি পেয়েছিল তাঁর দল এডিএমকে। জয়ললিতার মৃত্যুর পরে এআইডিএমকে-র মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ফলে, এবার তারা বেশি আসন পাবে বলে মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। আবার বিপাকে পড়েছে শিবকুমারের মতো কর্মী-সমর্থকরাও, যারা ঘোর বিজেপি বিরোধী।