যেন মগের মুলুক! দেশে লোকসভা ভোট চলাকালীন জাতীয় নাগরিক পঞ্জী(এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(ক্যাব) নিয়ে আসামে যখন অস্বস্তিতে গোটা গেরুয়া শিবির, তখন বাংলায় দাঁড়িয়ে এনআরসি প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বললেন, ‘দেশটা ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়েছিল৷ ওপার বাংলা থেকে মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকতে দেব না৷ থাকতে দেব না৷ এনআরসি-এর মাধ্যমে চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হবে!’ অর্থাৎ বাংলাদেশি ‘মুসলমান’ অনুপ্রদেশকারীদের যে বাংলায় জায়গা দিতে অনিচ্ছুক কেন্দ্রের মোদী সরকার, সে কথাই ফের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন দিলীপ৷
প্রসঙ্গত, এরআরসি নিয়ে বিজেপির বাড়তি উদ্যোগের কারণ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল যা সংসদে এখনও আইন হিসাবে পাশ হয়নি৷ কী আছে এই নাগরিত্ব বিলে? প্রথমেই বলে রাখা ভালো ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিলের সঙ্গে সংশোধিত বিলের বিশেষ তফাত কিছুই নেই৷ এই বিল অনুসারে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে আসা মুসলমানরা যেমন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী, অন্যদিকে ওই তিন দেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি, শিখ বা খ্রীস্টানদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা হলেন শরণার্থী৷ আর ভারত সরকার, প্রতিবেশি দেশ থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেবে৷ কারণ, তাঁরা বিপদের মুখে নিজের দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন৷
অন্যদিকে, মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো হবে। কারণ মোদী সরকারের দাবি, সীমান্তের ওপার থেকে রোজগার বা বাসস্থান খুঁজে পেতে, কিংবা কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই তাঁরা এদেশে এসেছে! তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুরা, যারা গত একবছর ভারতে রয়েছেন বা শেষ ৬ বছর ধরেই এই দেশে রয়েছেন, তারাই নাগরিকত্ব আইনের (বিল আইন হিসেবে পাশ হয়ে যাওয়ার পর) আওতায় নাগরিক হতে পারবেন৷ এরপরেই আসামে এবং ত্রিপুরায় শুরু হয়ে যায় অশান্তি। অসমীয়রা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিরোধী৷ তাঁদের কাছে বাংলাদেশিদের ধর্মীয় বিভেদ গুরুত্বহীন৷ মুসলমান বা হিন্দু – কোনও বাংলাদেশিকেই আসামে অনুপ্রবেশ করতে দিতে চান না তাঁরা৷ ত্রিপুরার একটি অংশের মানুষও এই বিলের বিরোধী৷
বিজেপির এনআরসিমুখী প্রচারের পালটা জবাব দিতে ইতিমধ্যেই অাসামে সভা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুধু তাই নয়, রাজ্যের প্রতিটি জনসভাতেই এনআরসি এবং ক্যাব নিয়ে সরব হচ্ছেন তিনি৷ বিজেপির যাবতীয় হুমকিকে তোয়াক্কা না করেই মমতার পাল্টা চ্যালেঞ্জ, দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ‘এক্সপায়ারি ডেট’পেরিয়ে গিয়েছে৷ ‘এক্সপায়ারড পি এম মোদী’র আর বাংলায় এনআরসি করা হবে না৷ এমনকি, বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙের চকবাজারে তৃণমূল প্রার্থী অমর সিং রাইয়ের সমর্থনে হওয়া জনসভা থেকেও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলায় এনআরসি হতে দেবো না।’ ফলে দিলীপ যতই হুঙ্কার দিন না কেন, বাংলার বাঘিনীর গর্জনে মাঠেই মারা যাচ্ছে তা।