আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা চিঠিতে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে সংস্থার পাইলট-ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছিলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে কোনও মুহূর্তেই এই সংস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ তাঁদের সেই আশঙ্কা কি এবার সত্যি হওয়ার পথে? তবে কি শেষের শুরু? এমনই নানা প্রশ্ন আর আশঙ্কা উস্কে দিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতার আকাশে ডানা মেলল না জেট এয়ারওয়েজের কোনও বিমান। চালু হওয়ার পর থেকে গত ২৫ বছরে এ শহরের উড়ানসূচিতে সব সময় জ্বলজ্বল করেছে ‘এন ডব্লিউ’— জেটের উড়ান কোড। গতকাল তারও দেখা মিলল না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, নতুন কোনও নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কলকাতা সমেত পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত আপাতত থাকবে জেটের উড়ান মানচিত্রের বাইরে।
সমস্যা যে ক্রমশই বিপদসীমা ছাড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট জেটের অন্যান্য পদক্ষেপেও। সংস্থা সূত্রে খবর, গতকালই নিজেদের সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল করতে হয়েছে তাদের। লিজের টাকা না মেটানোয় তাদের আরও ১০টি বিমান বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও কবুল করেছে জেট। শোনা যাচ্ছে, এর ফলে এই মুহূর্তে তাদের হাতে থাকা বিমানের সংখ্যা মাত্র ১৪। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা চালানোর জন্য এ দেশে বিমান পরিবহণ সংস্থার হাতে অন্তত ২০টি বিমান থাকা জরুরি। ফলে, আগামী দিনে জেট ওই পরিষেবা আদৌ দিতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে এখন। বিমান পরিবহণ সচিব প্রদীপ সিংহ খারোলা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিয়ন্ত্রক ডিজিসিএ-র রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা।
সংস্থাটির অংশীদারি হাতে নিতে কারা আগ্রহ দেখায়, তা বোঝা যাবে আজ, শুক্রবারই। তবে অন্যতম অংশীদার এতিহাদ গতকালই প্রাথমিক আগ্রহপত্র জমা দিয়েছে। এই মুহূর্তে সংস্থার সিংহভাগ মালিকানা স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ ঋণদাতাদের গোষ্ঠীর হাতে। একটি সূত্রে খবর, জেটের প্রতিষ্ঠাতা নরেশ গোয়েল নিজের হাতে থাকা প্রায় ২৬% শেয়ার পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রেখেছেন। তার পরিবর্তে নাকি মোটা টাকা ঋণ নিতে পারেন। জল্পনা, জেটে নতুন করে টাকা ঢালার প্রস্তুতি নিতেই কি এই পথে হেঁটেছেন গোয়াল? গত বছরের শেষেও যেখানে ১১৯টি বিমান নিয়ে দেশ-বিদেশের আকাশ দখলের যুদ্ধ করেছে জেট, সেখানে এখন প্রশ্ন উঠছে বিদেশে তার উড়ান চালু থাকা নিয়েই। জানা গেছে, এই মুহূর্তে বাজারে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার দেনা জেট এয়ারওেজের। এর জেরেই গত কয়েক দিনে একের পর এক বিমান বসিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে তারা।