বৃহস্পতিবারই দার্জিলিঙের চকবাজারে তৃণমূল প্রার্থী অমর সিং রাইয়ের সমর্থনে হওয়া জনসভা থেকে আরও এক বার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে এবং বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলায় এনআরসি হতে দেবো না।’ আবার গতকালই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি শাহ রায়গঞ্জের জনসভা থেকে হুঙ্কার দেন, ‘মমতাজি সর্বশক্তি দিয়ে বাধা দিলেও এনআরসি ঠেকাতে পারবেন না। আসামের মতো এ রাজ্যেও নাগরিক পঞ্জী হবেই। অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে সাগরে ফেলে দেওয়া হবে।’ লোকসভা ভোট শুরুর দিনই নাগরিক পঞ্জী নিয়ে এভাবে তুমুল বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন শাহ এবং মমতা।
এ মাসের গোড়া থেকে উত্তরবঙ্গে প্রচার শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার রায়গঞ্জে এসে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে এ রাজ্যে এক জনের গায়েও হাত দিয়ে দেখান।’ নাগরিক পঞ্জী এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এর আগেও একাধিক বার বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন মমতা। বৃহস্পতিবার সেই রায়গঞ্জেই দলের নির্বাচনী সভায় শাহ বলেন, ‘বাংলায় এনআরসি হবেই।’ এই প্রসঙ্গে বিজেপির প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ব্যাখ্যা করে বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘বাঙালি শরণার্থীদের দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং খ্রিস্টান ধর্মের যে-সব মানুষ অত্যাচারিত হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা আমাদের সহোদর। তাঁরা অনুপ্রবেশকারী নন। তাঁদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে একাধিক বার রাজ্যে এসেছেন শাহ। এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তাঁদের প্রায় প্রতিটি বক্তৃতায় নাগরিকত্ব বিল এবং নাগরিক পঞ্জীর প্রসঙ্গ এসেছে। এসেছে অনুপ্রবেশকারী বিতারণের প্রসঙ্গ। সে-দিক থেকে শাহের গতকালের বক্তৃতা নতুন নয়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রায়গঞ্জের মতো সীমান্ত অঞ্চলে এসে বৃহস্পতিবারও ফের ‘মেরুকরণে’র তাস ব্যবহার করলেন শাহ। অন্যদিকে, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করছেন মমতা। আসামে বিজেপির বিরুদ্ধে বঙ্গভাষী হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম অত্যাচারের অভিযোগও একাধিক বার তুলেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সংসদেও প্রতিবাদ করেছে তাঁর দল তৃণমূল।
গতকাল শাহকে পাল্টা দেন করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বলেন, ‘উনি যতই হুঙ্কার দিন, বাংলায় কারও ক্ষমতা নেই নাগরিক পঞ্জী চালু করবে। বাংলার মানুষ বিভেদের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেন না। আমরা আগেও প্রতিবাদ করেছি, এখনও করছি এবং পরেও করবো। মানুষ ওই দাঙ্গাবাজকে উচিত শাস্তি দেবে।’