হুগলী লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জেলা নেতৃত্বের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ‘বহিরাগত’ লকেট চট্টোপাধ্যায়। প্রথমে তাঁর প্রার্থী হওয়ায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি রাজকমল পাঠক। আর তারপর ভোটে কাজ না করার কথা জানিয়ে দেন আর এক সহ সভাপতি রাজকুমারী কেশরী। দলের গোষ্ঠীকোন্দলের ফলে অবস্থা এখন এমনই যে সকাল থেকে পার্টি অফিসে বসে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুনতে শুনতেই দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যাচ্ছে লকেটের। শিকেয় তুলে দিতে হয়েছে ভোট প্রচার। এর ওপর সদ্যই জানা গেছে, বিভিন্ন জেলায় লকেটের নামে ঝুলছে প্রায় ১৪টি মামলা।
প্রসঙ্গত, আদিবাড়ি বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের পাঁচাল গ্রামে হলেও কর্মসূত্রে বাবা সহ পরিবারের সদস্যরা বংশপরম্পরায় দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পূজারী হওয়ায় দক্ষিণেশ্বরেই জন্ম লকেটের। দক্ষিণেশ্বরের সারদাদেবী বালিকা বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে যোগমায়াদেবী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হন ও কম্পিউটারে ডিপ্লোমা করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে ‘মানুষ-অমানুষ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমা জগতে পা রাখেন লকেট। এরপর দশ বছর ধরে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টি সিনেমায় অভিনয় করেন লকেট। রাজ্যে বাম শাসনের পরিবর্তনের পর তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার এলে ২০১২ সালে রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। সেই সময় থেকেই তাঁর রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়।
উল্লেখ্য, ওই সময়ে বীরভূমের একাধিক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তিনি কমিশনের সদস্য হিসাবে যান। এরপর ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন লকেট। এরপরেই তাঁর নতুন দল তাঁকে রাজ্য মহিলা সংগঠনের সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়। তারপর থেকেই দলের হয়ে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় বিভিন্ন ঘটনায় কর্মীদের পাশে থেকে নেতৃত্ব দেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে বীরভূমের ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়াই করে পরাজিত হন। ২০১৭ সালে রাজ্যে বিজেপির মহিলা সংগঠনের সভানেত্রীর দায়িত্ব পান। তারপর থেকেই সংগঠনকে মজবুত করে তুলতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। দলের সাংগঠনিক পদে থেকে আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন জেলায় এখন তাঁর বিরুদ্ধে মোট ১৪টি মামলা রয়েছে।
মনোনয়ন পেশের সময় হুগলীর বিজেপি প্রার্থী লকেট যে হলফনামা পেশ করেন তা থেকে জানা গেছে, তাঁর হাতে নগদ রয়েছে ২৭,৫৩৪ টাকা। স্বামী প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্যর হাতে নগদ রয়েছে ২৫০০০ টাকা। তিন ব্যাঙ্ক মিলিয়ে তাঁর মোট জমা টাকার পরিমাণ ১০,৮৭,৩৪৩ টাকা। এ ছাড়াও নিজের এবং স্বামীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির যাবতীয় তথ্যের পাশাপাশি রয়েছে কোথায় কোথায় তাঁর নামে মামলা রয়েছে, তার বিবরণও। ওই হলফনামা থেকে জানা গেছে, বীরভূমের মহম্মদবাজার, সাহেবগঞ্জ, দিনহাটা, ইংরেজবাজার, হেয়ার স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন থানায় মোট ১৪ টি মামলা রয়েছে লকেটের নামে। জানাজানি হতেই যা এখন অস্বস্তির কারণ হয়েছে বিজেপি প্রার্থীর।