আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই দেশে জুড়ে শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচন। কিন্তু ভোটের আগেই এ রাজ্যে একপ্রকার হেরে বসে আছে বিজেপি। কারণ প্রার্থী বাছাইয়ের সময় থেকেই রাজ্য জুড়ে যে গোষ্ঠীকোন্দল শুরু হয়েছে দলের অন্দরে, প্রার্থী ঘোষণার পর তা আরও ভয়ানক চেহারা নিয়েছে। এমনকি দলীয় কর্মীদের তরফে বিজেপির ‘বহিরাগত’, ‘স্মাগলার’ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পোস্টারও পড়েছে।
ড্যামেজ কন্ট্রোলে গত কয়েকমাসে একাধিকবার রাজ্যে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ দিতে মালদা, কাঁথির সভা থেকে তিনি বলেছেন যে, রাজ্যে বিজেপির শক্তি বাড়ছে। নির্বাচনের ফলেই তা বোঝা যাবে। বাংলায় ২৩টি আসন পাবে বিজেপি। কিন্তু প্রথম দফার ভোটের ঠিক একদিন আগে বাংলায় আসনসংখ্যা নিয়ে কোনও মন্তব্যই করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শাহের দাবি অনুযায়ী এ রাজ্যে বিজেপির আসনসংখ্যার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে সেই প্রশ্ন এড়িয়েই যান মোদী। নিজের অস্বস্তি লুকাতে বলেন, ‘সংখ্যায় যাচ্ছি না।’
সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে মোদীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, নির্বাচনী প্রচারে অমিত শাহ দাবি করেছেন বাংলায় ২৩টি আসন পাবে বিজেপি, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কী মত। এই প্রশ্নের উত্তরে মোদী বলেন, ‘আমি সংখ্যায় যাচ্ছি না।’ এরপরেই তড়িঘড়ি কথা ঘোরাতে বিজেপি সভাপতির গুণগান গাইতে শুরু করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘অমিত শাহ দলের অন্যতম পরিশ্রমী নেতা। আমার প্রচারে মিডিয়া যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাঁর প্রচারে অতটা দেখা যায় না। আমার মনে হয় না, সারা বছর ধরে ওঁর মতো পরিশ্রম আর কোনও দলের নেতা করেছেন।’
কিন্তু প্রশ্ন হল, ভোটের আগে যখন স্বয়ং বিজেপি সভাপতি থেকে শুরু করে মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষের মতো রাজ্য নেতারা দাবি করছেন, রাজ্যে ২২-২৩টি আসন পাবে বিজেপি, তখন প্রধানমন্ত্রী চুপ কেন? বাংলা থেকে আসন পাওয়া নিয়ে কি সংশয়ে মোদী? শাহের ঘোষণাতেও কি আশ্বস্ত হতে পারছেন না তিনি? তবে কি তা ফাঁকা আওয়াজই ছিল? উঠছে আরও নানা প্রশ্ন। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, ‘সত্যি কথাটা বেরিয়ে এল মোদীর মুখ থেকে। সংখ্যার ব্যাপারে যাওয়ার প্রশ্নই নেই এ রাজ্যে। কারণ বাংলা থেকে একটিও আসন পাবে না বিজেপি।’
আর রাজনৈতিক মহলের মতে, মোদী যে বাংলা নিয়ে ছিটেফোঁটাও আশাবাদী নন, তা তাঁর বক্তব্যেই প্রকাশ পেয়েছে। তিনি এটা ভাল মতোই বুঝতে পারছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে দাঁত ফোটানো মোটেই সহজ কাজ নয় বিজেপির রাজ্য সংগঠনের পক্ষে। ২৩ আসন পাওয়া তো দূরের কথা, এ রাজ্যে বিজেপিকে হোয়াইট ওয়াশ হওয়ার হাতে থেকে বাঁচানোই তাঁর কাছে এখন আসল চ্যালেঞ্জ।