কিছু বছর আগেও এমনটা দেখা যায়নি। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটের তৃণমূলের সভাগুলোয় দেখা যাচ্ছে মহিলা সমাবেশ অনেক বেশি। সে গ্রাম হোক বা শহর, সব সভাতেই মহিলা সমর্থকের ভিড় বেশি। বসিরহাটে নুসরতের সভায় অর্ধেকের বেশি জায়গা জুড়ে রয়েছেন মহিলারা। বাধ্য হয়ে পুরুষ ও মহিলাদের বসার জন্য আলাদা ব্যারিকেড করতে হচ্ছে। অনেকেই বুতে পারে নুসরত অভিনেত্রী, কিন্তু না, মহিলা সমর্থক টানার রহস্য অন্য জায়গায়।
গ্রামের মেয়েদের আগে অনেক পথ হেঁটে আগে স্কুলে যেতে হত, মমতা বন্দোপাধায়ের ‘সবুজসাথী’ প্রকল্পের পরে উপকৃত হয়েছেন অনেক মেয়েরা। গত সপ্তাহে হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ বাজারে তৃণমূল প্রার্থী নুসরত জাহানের নির্বাচনী সভা ছিল বেলা ১১টায়। হিঙ্গলগঞ্জে পানীয় জল সংগ্রহ করা একটা বড় কাজ। এই অঞ্চলে একটা সময়ের পরে টাইম কলে জল চলে যায়। তাই ওই সময় গ্রামের মহিলারা রান্না করেন। জল আনতে যান। তবু বেলা ১০টা থেকে সুন্দরবনের গ্রাম থেকে মহিলারা হাজির হন নুসরতের সভায়। অতসী মুন্ডা, নিয়তি মুন্ডা, পার্বতী সর্দার, কল্যাণী মণ্ডল, সন্ধ্যা পাত্ররা রোদের মধ্যেই বসেছিলেন। নুসরতকে দেখতে এসেছেন, এই প্রশ্ন করা হলে তাঁদের চটজলদি উত্তর, “একেবারেই না। নায়িকা দেখার জন্য এই রোদে ঘরের কাজ ফেলে আসব কোন দুঃখে? আয়লার পর সব শেষ হয়ে গেছে আমাদের। এখনও চাষ ভাল হয় না। মমতা ব্যানার্জি আমাদের ২ টাকা কিলো চাল দিচ্ছেন বলে না খেয়ে মরিনি। আয়লার পর যেভাবে বাঁধের কাজ হচ্ছে, তাতে আমরা এখন আর বর্ষায় রায়মঙ্গল কালিন্দির চোখ রাঙানিতে ভয় পাই না”।
হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ বাজারের প্রতিমা সর্দারের এসেছিলেন নুসরতের সভায়। তাঁর বাড়ি গোবিন্দ কাটি গ্রামে। রতিমার দুই মেয়ে। তাঁরা একজন ক্লাস ইলেভেনে ও অন্যজন ক্লাস নাইনে পড়ে। স্বামী খেতমজুর। প্রতিমা স্পষ্টই বললেন, “আমার মেয়েরা আগে প্রায় ১ কিলোমিটার নদীর ভেড়ি ধরে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেত। এখন ঘরে দুটো সবুজসাথীর সাইকেল। মেয়েদের এখন আর পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয় না। এমনকী আমি এবং আমার স্বামীও ওদের সাইকেল সংসারের কাজে ব্যবহার করি”।
তৃণমূলের জেলা সম্পাদক রিঙ্কু দত্ত দে বলেন, “বেলা ১১টায় সভা করলেও মহিলাদের ভিড় যেমন, দুপুর ১টা এবং বিকেল ৪টের সভাতে একই রকম ভিড় হচ্ছে মহিলাদের। নুসরত বলে নয়, দলের সভা যেখানেই হচ্ছে, সেখানেই মহিলারা বেশি সংখ্যায় উপস্থিত হচ্ছেন। আসলে এটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকে সকলে আসছেন”। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পগুলি পাশাপাশি মেয়েরা সব ক্ষেত্রে সুরক্ষিত। তাই তাঁরা মা-মাটি-মানুষের সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।