প্রার্থী বাছাইয়ের আগে থেকেই গোষ্ঠীকোন্দল প্রকট হয়ে উঠেছিল রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। অবশেষে হাজারও টালবাহানার পর ধাপে ধাপে বাংলায় তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। কিন্তু রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের জন্য দিল্লীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রকাশ করা প্রার্থী তালিকা নিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ ক্ষুব্ধ। একদিকে, তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস থেকে সদ্য গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়া নেতাদের লোকসভার টিকিট পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ চরমে। অন্যদিকে, বিজেপির সঙ্গে সরাসরি যোগ না থাকা ‘অজানা সমীকরণে’ পদ্ম প্রতীক প্রাপকদের নিয়েও ব্যাপক অভিমান রয়েছে দলের প্রবীণ নেতাদের। ফলে জেলায় জেলায় বিজেপির অভ্যন্তরে চলা গোষ্ঠীকোন্দল এখন ব্যাপক আকার নিয়েছে।
শুধু তাই নয়। বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বহু জেলা সভাপতি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের পর্যাপ্ত সহায়তা করছেন না বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। সূত্রের দাবি, একাধিক কেন্দ্রের প্রার্থীর তরফে রাজ্য ও দিল্লী নেতৃত্বকে এ নিয়ে অনুযোগও জানানো হয়েছে। এবার এই দ্বন্দ্ব মেটাতে আসরে নামতে বাধ্য হলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গত সোমবার কলকাতার এক গোপন ডেরায় দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত প্রার্থী ও জেলা সভাপতিদের ডাকা হয়েছিল। সেখানে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহ সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ কড়া ভাষায় জেলা নেতৃত্বকে বার্তা দেন। তাঁদের বক্তব্য, সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। দিল্লী যাকে যোগ্য মনে করেছে, তাঁকে টিকিট দিয়েছে। তাই এখানে ক্ষোভ-বিক্ষোভ করে লাভ নেই।
এ প্রসঙ্গে দলের এক রাজ্য নেতা বলেন, বহু ক্ষেত্রে প্রার্থীর সঙ্গে জেলা সভাপতিদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কারণ, এমন বহু প্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সেই সূত্রে পুরনো দলের বহু পরিচিত কর্মী স্থানীয় নেতাদের সেই প্রার্থী বিজেপির পতাকা ধরিয়ে দিচ্ছেন। যা সম্পর্কে জেলা নেতৃত্বকে কিছুই জানানো হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, জেলায় জেলায় শাসকদলের সঙ্গে আমাদের কর্মীদের নিত্যদিন সংঘর্ষ চলছে। সেক্ষেত্রে জেলা সভাপতিদের তরফে অভিযোগ করা হচ্ছে, দু’দিন আগেই যাঁদের সঙ্গে ঝামেলা করেছিলেন, তাঁরাই এখন প্রার্থীর পাশে পাশে ঘুরছেন।
দক্ষিণবঙ্গের একাধিক কেন্দ্রের প্রার্থীদের নামে এই নালিশ আসছে। বিষয়টি খোদ দিল্লী নেতৃত্বের কানেও পৌঁছেছিল। তাই ভোটের আগে এই অভ্যন্তরীণ গোলমাল বন্ধ করতে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক চলে। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাফ জানিয়েছে, নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য ভুলে জয়ের লক্ষ্যে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। জেলা সভাপতিদের সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের সাংগঠনিক শক্তি মজবুত করার কাজে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে হবে। তবে নেতৃত্ব যাই বলুক না কেন, একেবারে অচেনা-অজানা প্রার্থীদের নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদেরই। আনকোরা প্রার্থীদের সঙ্গে দলের কর্মী-সমর্থকদের পরিচয় করাতে গিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়ছেন তাঁরা। যার ফলে ভোট শুরু হয়ে গেলেও এখনও ক্ষোভের আগুন নেভেনি রাজ্যের গেরুয়া শিবিরে।