গতবার দার্জিলিংয়ে জিতে আর পাহাড়মুখো হননি বিজেপির বিদায়ী সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। যা নিয়ে বেশ কয়েকবার ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব তথা গোটা পাহাড়বাসী। এই ক্ষোভের কথা জেনেই এবার তাঁকে পাহাড় থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ফলে হাসিমুখেই তাঁর কেন্দ্রে প্রচারে সারতে এসেছিলেন আলুওয়ালিয়া। কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না তাঁর। বরং বিতর্কিত প্রশ্নের মুখে পড়ে এক সময় দিশেহারা অবস্থা হয় আলুওয়ালিয়ার।
বুধবার বর্ধমান আদালত চত্বরে ভোট প্রচারে এসে এমনই চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয় বিজেপি প্রার্থীকে। দার্জিলিঙে জেতার পরও যখন সেখানে গোলমাল হয়, কেন তাঁকে দেখা যায়নি? কেন তিনি ওই সময় সেখানে ছিলেন না, সেই প্রসঙ্গ উঠতেই রীতিমতো সমস্যায় পড়েন আলুওয়ালিয়া। আইনজীবীদের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি কার্যত থমকে যান। অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে তিনি সাফাই গান, ‘দার্জিলিং থেকে আমি পালিয়ে যাইনি। সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণের জন্যই ওই সময় আমি দার্জিলিঙে যাইনি।’ তার মধ্যে একটি কারণ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গতকাল ভোটের প্রচার করতে আলুওয়ালিয়া বর্ধমান আদালত চত্বরে এসে পৌঁছলে সেখানে আইনজীবীদের সঙ্গে কথোপকথনের মাঝে এক আইনজীবী আচমকাই প্রশ্ন করেন, ‘ভোটের শেষে আপনাকে আবার পাওয়া যাবে তো?’ তৎক্ষণাৎ তিনি হাতজোড় করে বলেন, ‘আপনাদের আশীর্বাদ নিতে এসেছিলাম।’ আইনজীবীর উত্তর, ‘আশীর্বাদ করবেন ওপরওয়ালা।’ এরপর আলুওয়ালিয়া ফের বলেন, ‘ওপরওয়ালার আশীর্বাদ তো পেয়েছি। এবার আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। আপনারাও যোগাযোগ রাখবেন।’
আর ঠিক তখনই সেই আইনজীবী প্রশ্ন করে বসেন, ‘ভোটের পর সেই সুযোগ মিলবে তো?’ ঘুরে-ফিরে সেই দার্জিলিঙের অশান্তির সময় তাঁকে পাওয়া না যাওয়ার প্রসঙ্গ ওঠে। এর উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দার্জিলিঙের লোক নই। দার্জিলিঙে আর ভোটে দাঁড়াব না। দার্জিলিঙে যখন গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চলছিল, তখন সেই কথা আমি দলকে জানিয়েও ছিলাম। আমি সেখানে থাকতে না থাকতেই সেই অশান্তিতে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।’
এরপরই তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে গেলে অশান্তি যদি বাড়ত, তা হলে সেই অভিযোগ আরও জোরদার হত। তাই তখন সেখানে থাকা সম্ভব হয়নি।’ এ ভাবেই একের পর সাফাই দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেন বিজেপি প্রার্থী আলুওয়ালিয়া। কিন্তু এতে যে আদৌ ড্যামেজ কন্ট্রোল হয়নি, এবং ভবিষ্যতেও যে এমন সব প্রশ্ন উঠবে তা ভাল মতোই টের পেয়েছেন গেরুয়া শিবিরের এই বর্ষীয়ান নেতা। যে কারণে বেজায় অস্বস্তিতে তিনি।