বুধবার রানাঘাট-২ ব্লকের ধানতলা থানার কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী রূপালি বিশ্বাসের সমর্থনে সভা করলেন শিক্ষামন্ত্রী তথা নদিয়া জেলার পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সভামঞ্চ থেকে বিজেপি এবং মুকুল রায়কে কার্যত তুলোধোনা করলেন তিনি।
সভামঞ্চ থেকে পার্থ বললেন, “২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ১৩০ টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচটা প্রতিশ্রুতি রাখার কথা কেন্দ্র সরকার বলুক। তাহলে আমরা আমাদের তৃণমূল প্রার্থী রূপালি বিশ্বাসের পদ প্রত্যাহার করে নেব। মানুষকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি, একটা কথাও রাখেননি মোদী”।
পাশাপাশি এদিনের জনসভা থেকে পার্থবাবু বিজেপিকে ব্যাকফুটে ফেলতে বলেন, “আজ মুকুটমণি, কাল আবার বাবা জগন্নাথ। নিজেরা আগে নিজেদের প্রার্থী ঠিক করুন। প্রথমে রানাঘাট কেন্দ্রে রুপালি বিশ্বাসের সঙ্গে লড়াইয়ের কথা ভাবুন। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়াইয়ের কথা ভাববেন”। একই সঙ্গে নাম না করে মুকুল রায় প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব বলেন, “পুলিশ সুপার বদলের ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিবাদ করা হয়েছে।”
এবার যে উন্নয়নের ইস্যুতে ভোট হবে সে প্রসঙ্গে পার্থ বলেন, “আট কোটি মানুষকে বর্তমানে দু’টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে রাজ্য। নদিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েও ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। জিএসটি ও নোট বদলের প্রসঙ্গে এদিন পার্থবাবু তুলে ধরেন কৃষি প্রধান নদীয়া জেলার চাষী ও তাঁত শিল্পীদের সমস্যার কথাও।”বিরোধী দলগুলিকে এক সুরে বিঁধে এদিন তিনি বলেন, কংগ্রেস বিজেপি ভাই ভাই, রানাঘাটে স্থান নাই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম না করে পার্থবাবু বলেন, “চৌকিদার নাম করে নেপো দই খাচ্ছে। কোথায় গেল এ দেশের কালো টাকা? ১৫ লক্ষ করে টাকা দূরে থাক, ১৫ পয়সা করেও গরিব মানুষের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। দেশের ক্ষুদ্র শিল্পকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।।” পাশাপাশি তিনি এও বলেন, দু কোটি মানুষের চাকরি দেওয়ার নামে বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাতে মানুষ চাকরি পায়নি বরং দু’কোটি মানুষ কর্মহীন হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে পার্থ আরও বলেন, “চৌকিদারের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও ললিত মোদি, বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি কয়েক লক্ষ-কোটি টাকা নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেল। কমল ফুলের কথা বলছে ওরা। অথচ সেই কমল ফুলের কোনও কমলত্ব নেই। দেশকে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে বিজেপি। ধর্মকে সামনে এনে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে যে রাজনৈতিক দল কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকার কথা ভাবছে, তাদের যোগ্য জবাব দেওয়ার সুযোগ এসেছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে”। তাই সাধারণ মানুষকে একত্রিত হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ের ডাক দেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের এনআরসি বিলের বিরোধিতায় সরব হন।
পার্থবাবুর জনসভা ঘিরে এদিন ধানতলার পূর্ব নপাড়ার মাঠ দলীয় কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। বুধবারের সন্ধ্যায় কালো মেঘ ঘনিয়ে এলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ উন্মাদনা ছিল লক্ষণীয়। সভা মঞ্চ থেকেই রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী রূপালি বিশ্বাস সাধারণ মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ভোট প্রার্থনা করেন।
ধানতলায় আসার আগে চাকদেহ প্রার্থীকে নিয়ে রোড শো করেন পার্থবাবু। সভায় উপস্থিত ছিলেন নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বর্ণালী দে, বিধায়ক সমীরকুমার পোদ্দার, শংকর সিংহ, রানাঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিতা পোদ্দার, রানাঘাট-১ তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস ঘোষ, রাজ্য যুব নেত্রী জয়া দত্ত, নদিয়া জেলা তৃণমূল যুব নেতা যীশু সিংহ-সহ এক ঝাঁক জেলা নেতৃত্ব।