আজ বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কুশমন্ডিতে জনসভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তৃতার প্রথমেই তিনি ধন্যবাদ জানান জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র, মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনির্মল বিশ্বাস এবং উপস্থিত সমস্ত বিধায়কদের। আজ সভামঞ্চ থেকে বিজেপির প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনি।
আজ তাঁর এই সভায় উপচে পড়েছিল ভীড়। এই জনসমাগম দেখে অভিষেক বলেন, “ এই জনজোয়ার দেখে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করতে পারি বালুরঘাটে প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা”। হাততালির বন্যা বয়ে যায় এই কথায়।আজ অর্পিতার সমর্থনেই আয়োজিত হয়েছিল এই সভা।
অভিষেক অন্যান্য সভার মতই এখানেও মমতার উন্নয়নের তথ্যভিত্তিক বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন, “ভোটের ফল বেরোলে এখানে বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না”। আত্মবিশ্বাসের সুরে তিনি বলেন, “যদি কেউ আমার বক্তব্যকে মিথ্য প্রমাণ করতে পারেন বা আমার অভিযোগের যথাযথ উত্তর দিতে পারেন তাহলে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি আমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক”। এরপরে তিনি বলেন, “ অবান্তর কথা বলে আমি মানুষকে বিভ্রান্ত করিনা।”এরপরে আজ বাংলার দুই কেন্দ্রের ভোট প্রসঙ্গে তিনি জানান, “এখনও অবধি আমার কাছে যা খবর, ৫০% ভোট পড়ে গেছে, আর এর মধ্যেই বিজেপিকে বামকে গোল দিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।আজকে ২-এ ২ হয়ে গেছে। এখন লড়াইটা ৪০-এ ৪০ করার”।
এরপর মিডিয়ার বিভ্রান্তমূলক আলোচনা নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “মিডিয়া বলছে বিজেপি নাকি বালুরঘাটে জয়ী হবে। আমি ওসব সমীক্ষা জানিনা, বহুদিন রাজনীতি করছি তাই মানুষকে বুঝি। তাই দায়িত্ব নিয়ে বলছি ২ লক্ষের বেশি ব্যবধানে আমরা জিতব। আমাদের কাছে কিছুটা সময় রয়েছে আগামিদিনেও প্রমাণ করব এই কথা। কারণ এবার দেশ বাঁচানোর লড়াই। ২০১৪ সালে সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে, ২ কোটি বেকারের চাকরি হবে, স্কুল হবে, কলেজ হবে, বাংলাকে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, এই হবে তাই হবে। কিন্তু হল কী? আচ্ছে দিনের নামে নোটবন্দী করে মানুষকে হয়রানি করা হল, আর নীরব মোদী টাকা নিয়ে পালাল আর নিজে বিশ্ব ভ্রমণ করছে। গ্যাসের দাম বাড়ল আর দিল্লীতে বিজেপির নেতারা সেভেন স্টার পার্টি অফিস তৈরি করল। ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই আচমকা ভোটের আগেই গ্যাসের দাম কমে গেল”।
এরপরে তিনি বলেন, “ মানুষ যেভাবে তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে তা মোদী করে দেখাক। উনি নিজে বলেন মেক ইন ইন্ডিয়া অথচ উনি নিজে জার্মানি থেকে আনা গাড়িতে ঘোরেন, তাঁর সব জিনিস আসছে চীন থেকে, বুলেট ট্রেন আসছে জাপান থেকে আর রাফাল আসছে ইটালী থেকে। এই হচ্ছে মোদী। উনি ২০১৪ সালে বলেছিলেন, আমরা চা বিক্রি করে। আমি যদিও কখনও দেখিনি। কিন্তু আমাদের দলনেত্রী টালির ঘরে থেকে মানুষের জন্যে কাজ করেন, এই হচ্ছে আমাদের নেত্রী। আসলে মোদীর বলা উচিৎ, আগে চা বিক্রি করতাম, হাতে ছিল কেটলি, এখন দেশ বিক্রি করি, সাথে অরুণ জেটলি। যত চোর-ছ্যাঁচড়ের দল। আমরা যাদের দলে রাখিনা,ফেলে দিই তাদেরকেই বিজেপি কুড়িয়ে নেয়। ভোটের দিন এই সব কিছুর প্রতিবাদে ভোটবাক্সে গর্জে উঠুন আপনারা”।
এরপর তিনি বলেন, “বিজেপির ফ্ল্যাগ লাগানোর লোক পর্যন্ত নেই, খালি মুখেই মারিতং জগত। অন্যদিকে আমাদের নেত্রী যা যা বলেছেন তার সব করে দিয়েছেন। ভোট মিটলে ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। থেকে যাবেন শুধু মমতাই। তাই বন্যা দুর্গত অঞ্চলে একমাত্র মমতাই এক হাঁটু জলে নেম পরিদর্শন করতে গেছেন। আর মোদীর তো এমন অবস্থা যে শেষে সেনার নামে ভোট চাইছেন।২০১৯, বিজেপি ফিনিশ। ২৩মে ওরা বুঝবে তৃণমূল কি জিনিস! লড়ছে মমতা দেখছে দেশ আগামী দু মাসে মোদী শেষ। ওরা বলে ভারতমাতা কি জয়, আমি বলব ভারতীয় জনতা পার্টির মনে ঢুকে গেছে ভয়, ভারতমাতা কি জয়, দাঙ্গার রাজনীতি আর নয়। এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে”। আজকের সভার এই বিপুল উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিল মানুষ রয়েছে মমতার পাশেই।