[Total_Soft_Poll id=”2″]
ক্যালেন্ডার বলছে বাকি আর মাত্র ১ দিন। তবে হাতে আর ২৪ ঘন্টাও বাকি নেই। আগামীকাল থেকেই শুরু হতে চলেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। কিন্তু তার আগে আবারও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আবারও রদবদল হল রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনে। লম্বা হল এ রাজ্যের আইপিএস বদলির তালিকা। গত শুক্রবারের পর গতকাল, মঙ্গলবার আবারও নির্বাচন কমিশন একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেয়, কোচবিহারের পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তকে অপসারণ করা হচ্ছে। তাঁর জায়গায় কোচবিহারের নতুন পুলিশ সুপার হচ্ছেন অমিতকুমার সিংহ। সেই সঙ্গে এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অভিষেক গুপ্ত ভোটের কোনও কাজই করতে পারবেন না।
গুপ্তের অপসারণ নিয়ে কমিশন কোনও কারণ না দেখালেও মনে করা হচ্ছে আগেরবারের মতো বিজেপির তোলা কোনও ভুয়ো অভিযোগেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল কোচবিহারে নির্বাচনী জনসভায় অভিষেক গুপ্তের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ এনেছিলেন মুকুল রায়। তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেননি তিনি। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই এমন একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে। সেইসঙ্গে ক্রমশই দৃঢ় হচ্ছে বিজেপির প্রতি কমিশনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ।
মুখ খুলেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলও। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তের অপসারণ নিয়ে দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ আগেই বলেছিলেন বদলির তালিকা আরও বাড়বে। তাঁদের বক্তব্যের পরেই যে ভাবে পুলিশ সুপারকে সরিয়ে দেওয়া হল সেটা কি নিরপেক্ষতার লক্ষণ? এতে আমাদের লজ্জার কিছু নেই। যাঁরা বলছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব, এটা তাদের লজ্জা। এরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চালাবে?’ পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, বিষয়টি নিয়ে দল নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবে কি না, তা দলের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করা হবে।
উল্লেখ্য, এই নিয়ে পাঁচ জন আইপিএস বদল করল নির্বাচন কমিশন। এর আগে কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার-সহ মোট চার জন আইপিএস অফিসারকে বদলি করেছিল নির্বাচন কমিশন। তাঁদের জায়গায় আনা হয় নতুন অফিসারদের। অনুজ শর্মার জায়গায় কলকাতা পুলিশের নয়া কমিশনার হিসাবে নিয়োগ করা হয় রাজেশ কুমারকে। আগে যিনি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এডিজি ছিলেন। অনুজ শর্মাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্য পুলিশের এডিজি (অপারেশনস) পদে। বিধাননগরের সিপি জ্ঞানবন্ত সিংহকে সরিয়ে সেই জায়গায় আনা হয় রাজ্য পুলিশের এডিজি (অপারেশনস) নটরাজন রমেশ বাবুকে। জ্ঞানবন্ত সিংহকে অর্থনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত শাখার অধিকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তেমনই ডায়মন্ড হারবারের এসপি এস সেলভি মুরুগানের জায়গায় নিয়ে আসা হয় কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের ডিসি শ্রীহরি পাণ্ডেকে। এস সেলভি মুরুগানকেও রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর ৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার পদেবসানো হয়। বিধাননগরের ডিসি (এয়ারপোর্ট ডিভিশন) আভারু রবীন্দ্রনাথকে আনা হয় বীরভূমের এসপি শ্যাম সিংহের জায়গায়। শ্যাম সিংহকে দেওয়া হয় রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর ১৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার পদটি। দিল্লী থেকে আসা নির্দেশ মতোই রাতারাতি বদলি কার্যকর হয়।
[Total_Soft_Poll id=”3″]
প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সরকারি বাসভবনে নজিরবিহীন সিবিআই হানায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ধর্না-মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে উপস্থিত ছিলেন কিছু শীর্ষ পুলিশকর্তা। সেই পুলিশকর্তাদের মধ্যে ছিলেন অনুজ এবং জ্ঞানবন্ত। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সেই কারণেই বিজেপির তরফ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে ভুয়ো অভিযোগ এনে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে পাকাপাকি ভাবে সরানোর বন্দোবস্ত করা হয়। আর এবারও বিজেপির প্রতি পক্ষপাতী হয়েই কোচবিহারের পুলিশ সুপার বদল করল কমিশন।
কলকাতার পুলিশ কমিশনারের নজিরবিহীন বদলির পরই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে কড়া চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। শুধু তাই নয়, দেশের নাট্যকার, অভিনেতা, সমাজকর্মী, বিজ্ঞানীরাও কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে। এমনকি, ৬৬ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলাও ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে কমিশনের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা নিয়ে যাতে কোনও প্রশ্ন না ওঠে, তা সুনিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ২০১৬-য় রাজ্যে বিধানসভা ভোট শুরুর সময়ও ঠিক একই রকম ভাবে তখনকার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিয়েছিল কমিশন।