মানুষের মমতা

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরসঙ্গী হয়ে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন জেলায় ঘুরছি। সব জেলাতেই দেখছি মেয়েরা সাইকেলে করে স্কুলে কিংবা কোন কাজে যাচ্ছে। বহু বাড়িতেই দেখি একাধিক সাইকেল। গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাটে এমনিতেই সাইকেল বেশি। সেসব ভাবতে ভাবতে কয়েকবছর আগে তোলা এই ছবিটার কথা মনে পড়লো। একটা বিরাট মাঠে সারি সারি দাঁড় করানো ছিল সবুজসাথী প্রকল্পের সাইকেলগুলো।
কয়েকটা সাইকেল পাশাপাশি দাঁড় করানো থাকলে আমার মনে হয় যেন এক ঝাঁক মেয়ে কাঁধে হাত দিয়ে গল্প করছে। একটু দাঁড়ালেই হয়তো শুনবো একটা সাইকেল আরেকটা সাইকেলকে বলছে, আজ আমাদের খুব আনন্দের দিন। উত্তর আসবে ঠিক বলেছিস, যে আমাদের গ্রামগঞ্জের মেয়েদের কাছে পৌঁছে দিল তার সঙ্গে একদিন দেখা করতে হবে। শুনেছি সে নানা গাঁয়ে মিটিং করে বেড়ায়। জানি সবই আমার কল্পনা, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই আর কোন শব্দ শোনা যাবে না। খোলা মাঠে শুধু বয়ে যাবে বাতাস আর সেই বাতাসে সাইকেলগুলো একটা আরেকটার গায়ের ওপর পড়ে কলকল করে হেসে উঠবে।
সত্যি সাইকেল আজ বাংলার মেয়েদের জীবন বদলে দিয়েছে। সে যেন শিক্ষা, স্বাস্থ্যে, আত্নসন্মান ও স্বনির্ভরতায় গ্রামের মেয়েদের এক সুন্দর জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটা অবলম্বন। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজসাথী প্রকল্পের জন্য। আপনারা সবাই জানেন এই প্রকল্পে স্কুলে পাঠরত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীরা সাইকেল পেয়েছে। এতে শুধু তাদের স্কুলে যাওয়ার সুবিধা হয়েছে তাই নয়, এ সাইকেল হয়ে উঠেছে পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন। বাজারঘাট থেকে ডাক্তারের কাছে বা ব্যাঙ্কে যাওয়া সবটাই এখন অনেক সহজ।
আমি ভাবছিলাম গ্রামের বাড়িতে আমার ছোটবেলার দিনগুলির কথা। বাড়িতে ছিল সবেধন নীলমণি একটা সাইকেল। বাবার কাজের জিনিস। বাবারা ছ ভাই, সাইকেলে হাত দেওয়া বাবা মোটেই পছন্দ করতো না। কিন্তু বাবার অনুপস্থিতিতে তাতে কে চড়বে তা নিয়ে অন্য ভাইদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি ছিল রোজকার ব্যাপার।� আজকে অবাক শোনালেও তখন বাড়িতে একটা সাইকেল থাকা ছিল বিরাট ব্যাপার। কিন্তু আজকে নিম্নবিত্ত পরিবারেও কত সহজে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই যুগান্তকারী প্রকল্পটির সুবাদে ঢুকে গেছে ঝকঝকে নতুন সাইকেল।
কর্মসূত্রে গ্রামেগঞ্জে ঘুরতে ঘুরতে আমি দেখেছি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া মেয়েদের মুখে আত্মবিশ্বাস ও খুশির ঝলক। এতে দ্রুত স্কুলে যাওয়া আসার পাশাপাশি রোখা গেছে ইভটিজারদের উৎপাত, বেড়েছে পড়াশোনার সময়। গ্রামবাংলায় অনেক পরিবারই একটু আয় বাড়ানোর জন্য নানাধরণের হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সাইকেল সেই উৎপাদিত সামগ্রী পাইকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া ও কাঁচামাল সংগ্রহের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, ফলে পরিবারগুলি স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছে। অর্থাৎ শুধু শিক্ষা নয়, সাইকেল বদলে দিয়েছে গ্রামের অর্থনীতিও।
সারিবদ্ধ সাইকেলগুলো দেখতে দেখতে ভাবছিলাম ভোট মানেই শুধুই নির্বাচনী সভা, প্রার্থীদের তর্জা, পরস্পরের সমালোচনা, কুৎসা ও সন্ত্রাস নয়, বাংলায় এবারের ভোটে একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হল সাইকেল। কারণ, কিছু না বলেই সে অনেক পরিবারকে বিকাশের রাস্তায় নিয়ে এসেছে। গড়ে তুলছে অনেক মেয়ের ভবিষ্যৎ। সাইকেল যেন একটা শক্তি, সে যেন আমাদের ছোটবেলায় পড়া চড়িতেছি সাইকেল দেখিতে কি পাওনা কবিতাটার মত শুধুই ডাঁট দেখানোর জিনিস নয়। সবুজসাথী প্রকল্প আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। আমি নিশ্চিত যে মেয়েদের জীবন সাইকেল এভাবে বদলে দিয়েছে তাদের তো বটেই তাদের পরিবারের ভোটও তৃণমূলের দিকেই পড়বে।
সাইকেল বলতে মনে পড়ে কত হিট গান, কত প্রেমের দৃশ্য, দক্ষিণী ছবিতে সাইকেল তুলে মারামারিও আছে। রোজ সকালে উঠেই দেখা হয়ে যায় পাহাড়প্রমাণ কাগজ নিয়ে বাঁইবাঁই সাইকেল চালিয়ে ছুটে চলা সংবাদপত্র বিক্রেতা কিংবা পেল্লায় ড্রাম নিয়ে দরজায় এসে দাঁড়ানো দুধওয়ালার সঙ্গে। সাইকেল নিয়ে গান আছে, প্রেম আছে, রেসও হয়। এমনকি সাইকেল আছে নির্বাচনী প্রতীকেও। আপনারা সবাই জানেন মূলায়ম-অখিলেশ যাদবদের সমাজবাদী পার্টির প্রতীকও সাইকেল। ইদানিং তো দূষণরোধী যান হিসেবে এই দুচাকার রথটি আমাদের পরিবেশের সঙ্গেও জুড়ে গেছে। যাইহোক না কেন উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে সাইকেলের এমন ব্যবহার চালু করা কিন্তু একান্তভাবেই আমাদের দিদি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই অবদান।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত