ভোটের আগেই গোষ্ঠীকোন্দল, ‘বহিরাগত প্রার্থী’ থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে বাংলায় জমি হারাচ্ছে গেরুয়া শিবির। অবস্থা এমনই যে আগের বারের দুই জেতা আসনও হারাতে হতে পারে বিজেপিকে। কারণ এবারের লড়াইটা প্রতিশ্রুতিরক্ষার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন তাঁর দেওয়া প্রতিটা প্রতিটা প্রতিশ্রুতিই পালন করেছেন। তেমনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া প্রতিটা প্রতিশ্রুতিই শেষমেশ জুমলায় পরিণত হয়েছে। যেমনটা ঘটেছে আলিপুরদুয়ারের ক্ষেত্রে।
সেখানে বিজেপির ৭ চা-বাগান খুলতে না পারার প্রতিশ্রুতিভঙ্গের পাশাপাশি পাল্লার অন্যদিকে রয়েছে রাজ্যের উদ্যোগে একের পর এক বাগান খুলে দেওয়ার উদ্যোগ। তাই চা-বলয় অধ্যুষিত লোকসভার আনাচে-কানাচে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ‘আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছি।’ একদিকে ভূমিপুত্র তথা চা-বাগানের ঘরের ছেলে, অন্যদিকে হঠাৎ প্রচারে আসা বিতর্কিত নেতা। একদিকে উন্নয়ন। তো অন্যদিকে ভেদাভেদের রাজনীতি।
শুধু তাই নয় নির্বাচনের টিম গেমেও তৃণমূলের থেকে হাজার মাইল পিছিয়ে বিজেপি। দশরথ তিরকের হয়ে রোজই বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করে চলেছেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা। জেলায় চষে বেড়াচ্ছেন মোহন শর্মা, সৌরভ চক্রবর্তীরা। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী জেলার নেতাদেরই নামাতে পারছেন না। উল্লেখ্য, প্রার্থী ঘোষণার অনেক আগে থেকেই প্রচার শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। প্রার্থীও অচেনা নন। সাংসদ হওয়ার আগেও টানা তিনবারের বিধায়ক ছিলেন দশরথ তিরকে। বাম জমানায় দু’বার পূর্ত দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন।
এমনিতেই সাংগঠনিকভাবে তৃণমূল বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ভোট ঘোষণার শুরু থেকেই বিভিন্ন ব্লকে, প্রত্যন্ত এলাকায় শুরু হয়ে গেছে কর্মীসভা। ছোট ছোট পাড়া বৈঠকের পাশাপাশি চা-বলয়ের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে লম্বা মিছিল। এ কথা অস্বীকার করার জায়গাই নেই যে, ৮২টি চা-বাগানের কেন্দ্রে যাঁরা চা-শ্রমিকদের হৃদয় জয় করতে পারবেন, শেষ হাসিটি তাঁরাই হাসবেন। তবে চা-বলয় ও তার বাইরে কৃষিবলয়ে ঘটে যাওয়া শেষ ১০ দিনের ঘটনাপ্রবাহ তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকে-কে আরও অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে।
[Total_Soft_Poll id=”2″]
উল্টোদিকে, অনেকটাই কোণঠাসা বিজেপি। কারণ, প্রথমত জন বারলা প্রার্থী হতেই খোদ আদিবাসী সমাজেই তাঁকে নিয়ে চূড়ান্ত বিক্ষোভ দেখা যায়। অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের মতো আদিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনগুলি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘জন বারলা গদ্দার, বিমল গুরুংয়ের প্রার্থী। আমরা তৃণমূলকেই সমর্থন করব।’ আর যে মাদারিহাট বিধানসভায় জিতেছিল বিজেপি। সেখানেও তাদের ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছে। পাশাপাশি, গুরুং শিবিরের ভাঙনও বিজেপিকে অনেকটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে বিজেপিকে।
আর এ সবের সঙ্গেই যোগ হয়েছে এনআরসি ইস্যু। কয়েক দিন আগেই উত্তরবঙ্গে এসে অমিত শাহ হুঙ্কার দিয়ে গেছেন। এতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। অন্যদিকে, মমতা দ্বিধাহীনভাবে এনআরসির বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। এই ভূমিকা তৃণমূলকে যতটা বাড়তি সুবিধা এনে দেবে, ঠিক ততটাই পিছিয়ে রাখবে বিজেপিকে। এছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ইতিমধ্যেই ডানকানস গ্রুপের একটি ছাড়া বাকি সবকটি চা-বাগান খুলে গেছে। আরও ৩টি বাগান খোলার প্রক্রিয়া চলছে।
২০১১ সালের আগে চা-শ্রমিকদের যেখানে দৈনিক হাজিরা ছিল ৭০ টাকার কাছাকাছি। শেষ ৮ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ১৭৩। এটাও ঘাসফুল শিবিরকে অনেকটা মাইলেজ দিচ্ছে। শুধু তাই নয়। কালচিনি, মাদারিহাট, কুমারগ্রাম, নাগরাকাটা–সহ বিভিন্ন এলাকায় ৩ কোটি, কোথাও ৪ কোটি টাকায় পিএইচই তৈরি করেছে পানীয় জল প্রকল্প। মাদারিহাটে ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে বীরপাড়া-লঙ্কাপাড়া রোড। তার সঙ্গে নতুন জেলার স্বীকৃতি। সেই আবেগ এখনও বর্তমান। বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হচ্ছে। শীঘ্রই মেডিক্যাল কলেজও হবে।
ইতিমধ্যেই বাগানে বাগানে সমস্ত পরিষেবা নিয়ে পৌঁছে গেছে প্রশাসন। ‘আপনার বাগানে প্রশাসন’ কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে চা-বাগানে। জেলাশাসক থেকে জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের হাতের কাছে পেয়ে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে পেরেছেন চা–শ্রমিকেরা। বেশ কয়েকটি শিবিরে হাজির ছিলেন সাংসদ নিজেও। ফলে, সবমিলিয়ে তৃণমূলকেই এগিয়ে রাখছে রাজনৈতিক মহল।
[Total_Soft_Poll id=”3″]