২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগেও ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ অবতারে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ভোট প্রচারে বেরিয়ে সেবার তিনি ফেরি করেছিলেন ‘বিকাশ’-এর স্বপ্ন, দেশে আচ্ছে দিন আনার স্বপ্ন। দেশবাসীর কাছে তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরীর। বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে এনে গরিব মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। আবারও লোকসভা ভোটের আগে সেই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা রূপেই হাজির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে পুরনো প্রতিশ্রুতি আর নেই। সেসব এখন জুমলা হয়ে গেছে। এবার নতুন ‘স্বপ্ন’ ফেরি করছেন মোদী। তাও আবার বাংলায় এসে।
রবিবার কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে মোদী বলেন, ‘গরিবের কাছে ডেবিট কার্ডও আজ হয়েছে। ভারতে ফোনে কথা বলা বিনামূল্যে হয়ে যাবে আর ইন্টারনেট সবচেয়ে সস্তা হয়ে যাবে।’ অথচ পুরনো প্রতিশ্রুতি নিয়ে আর মুখ খুললেন না প্রধানমন্ত্রী। ভুলেও তুললেন না সকলের অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথাও। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গতকালও সেনাবাহিনীকে রাজনীতির স্তরে নামিয়ে আনেন মোদী। নিজেই নিজেকে বলেন ‘ভারত মাতার বীর সন্তান।’ তাঁর কথায়, ‘ভারত সন্ত্রাসবাদীদের ঘরে ঢুকে মারবে, এটাও অসম্ভব মনে হত, আজ সম্ভব হচ্ছে।’
গতকালও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে ভুয়ো অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মমতা!’ তা যে একেবারেই ভুল, এর প্রমাণ দিন কয়েক আগেই দিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এবং সে কাজে খোদ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানই তুলে ধরেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতে গিয়ে রাসমেলা ময়দানের তাঁর সভার কথাও তুলে আনেন মোদী। বলেন, ‘উল্টোদিকে মঞ্চ বানানো হয়েছে, যাতে আপনাদের অসুবিধা হয়।’ কিন্তু আদতে তা নয়।
উল্লেখ্য, প্রায় এক মাস আগেই কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী সভা করার জন্য এই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে রেখেছিল কোচবিহার জেলা তৃণমূল। দু’সপ্তাহ আগে থেকেই মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হয়ে যায়। অস্থায়ীভাবে মঞ্চের সামনে তৈরি করা হয় দর্শকদের বসার জন্য শেড। কিন্তু রাজনৈতিক সৌজন্যতা দেখিয়েই প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য সেই শেড সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের শাসক দল। অথচ তারপরও সভা নিয়ে অভিযোগ করে নিজের অসৌজন্যতার পরিচয়ই দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এমনটাই মত, রাজনৈতিক মহলের।