এবার হিন্দুত্ববাদীদের তান্ডব চলল হরিয়ানার গুরুগ্রামে। চৈত্র নবরাত্রি চলাকালীন সেখানে কোনও মাংসের দোকান খোলা যাবে না বলে ফতোয়া জারি করেছিল হিন্দু সংগঠনগুলি। শনিবার সকালে রীতিমতো লাঠি, তলোয়ার, লোহার রড হাতে গুরুগ্রামে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ায় হিন্দু সেনা নামের এক স্বঘোষিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের লোকজন। জোর করে শহরের প্রায় ১৮০টি দোকান বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার থেকে সারা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে চৈত্র নবরাত্রি উৎসব। চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। আর নবরাত্রিতে মাংস বিক্রি? নৈব নৈব চ। উৎসব শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই গুরুগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মাংসের দোকান বন্ধ করতে হিন্দু দক্ষিণপন্থী কয়েকটি সংগঠন বলপ্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, শনিবার জোর জবরদস্তি করে গুরুগ্রামের প্রায় ১৮০টি দোকানে ঝাঁপ ফেলে দেয় হিন্দু সেনা। হুমকি দেওয়া হয় আরও কয়েকশো মাংসের দোকানের মালিককে। লাঠি, তলোয়ার, হকি স্টিক নিয়ে জোর জবরদস্তি মাংসের দোকান বন্ধ করার ভিডিও ভাইরালও হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োতে দেখা গেছে, হাতে লাঠি, হকিস্টিক, তরবারি নিয়ে নবরাত্রি চলাকালীন মাংসের দোকান বন্ধ রাখার জন্য প্রতিটি দোকানে ঢুকে ঢুকে দোকানদারদের হুমকি দিচ্ছে স্বঘোষিত হিন্দু সেনারা। জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে দোকানের শাটার। এভাবে হুমকি দিয়ে প্রায় ১৮০টি মাংসের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গুরুগ্রামের অনেক দোকানদারই নিজেদের মাংসের দোকান বন্ধ রাখছেন। এক মাংস বিক্রেতা জানান, ‘আমি দোকান খুলে পরিষ্কার করছিলাম। সেই সময় কয়েকটি ছেলে এসে আমাকে দোকান বন্ধ করার জন্য হুমকি দিতে থাকে। রাজি না হলে তারা মারধরও করে। অথচ এই দোকান চালানোর লাইসেন্স আছে আমার।’
হিন্দু সেনার গুরুগ্রাম ইউনিটের প্রধান রিতু রাজ বলেছেন, ‘বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের প্রায় ২০০ জন সদস্য পুরনো রেলওয়ে রোডের কাছে শিবমন্দিরে জড়ো হয়। তারপর সবাই বিভিন্ন দিকে যায় মাংসের দোকান বন্ধ করার উদ্দেশ্যে।’ তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘ওই ২০০ জন সদস্য গুরুগ্রামের মাংসের দোকানগুলির ওপর নজর রাখছে। নবরাত্রির দিনগুলিতে কোনও দোকানই খুলতে দেওয়া হবে না।’
গুরুগ্রাম শাখার শিবসেনা সভাপতি গৌতম সাইনি বলেছেন, ‘প্রতিটি মাংসের দোকানের মালিক, কেএফসি এবং অন্যান্য ফাস্ট ফুডের দোকান মালিকদের নোটিস পাঠিয়েছি আমরা। নবরাত্রির দিনগুলোতে এই দোকান ধাবা, রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতি মঙ্গলবারও দোকান বন্ধ রাখা বাধ্যতামূলক।’ শুধু তাই নয়। সাইনি এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন যে, গুরুগ্রামের পর এবার নিউ গুরুগ্রামের মাংসের দোকান বন্ধ করা তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ(পশ্চিম) সুমের সিং জানান, ইতিমধ্যেই দক্ষিণপন্থী হিন্দু সংগঠনের ৪০ জনকে চিহ্নিত করে আটক করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রাকেশ ও প্রমোদ-সহ ৪০ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদেরকেই শনিবার থেকে মারমুখী ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। যদিও এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। তবুও ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’