দলের কাছে এখন মূল্য নেই তাঁদের অভিজ্ঞতার। শুধুমাত্র বয়সের কারণেই ব্রাত্য করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। অবস্থা এমনই যে জন্মলগ্ম থেকে যারা দলের পাশে ছিলেন, তাঁরাই আমন্ত্রিত ছিলেন না দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে! ৬ মার্চ তাই দিল্লীর দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির সদর দফতরে সশরীরে অনুপস্থিতই ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীরা। কিন্তু তাতে কী? দীর্ঘদিনের উপস্থিতির পরে, ক্ষণিকের অনুপস্থিতিই যে আরও বেশি করে কারও না থাকাটা টের পাওয়ায়। অগত্যা গতকাল হাজির না থেকেও নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধে রইলেন তাঁরাই।
দু’দিন আগে বিজেপির এই প্রতিষ্ঠা দিবসকে উপলক্ষ করেই ব্লগ লিখে আডবাণী কার্যত মোদী-শাহকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক বিরোধী মানেই দেশদ্রোহী নয়। রাজনৈতিক বিপক্ষ মানে শত্রু নয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার দায়িত্বও স্মরণ করিয়েছিলেন তিনি। মোদী জমানায় দলের চেয়েও মুখ্য হয়ে উঠেছে ব্যক্তি। বিগত ৫ বছর ধরেই একনায়কতন্ত্রের শিকার গোটা দেশ। তা দেখেই নীরবতা অবশেষে ভেঙে মুখ খুলেছিলেন ভারতীয় রাজনীতির ‘লৌহপুরুষ’। এবং নিজের ব্লগে ওই লেখাটির নাম দিয়েছেন, ‘নেশন ফার্স্ট, পার্টি নেক্সট, সেলফ লাস্ট’, অর্থাৎ ‘প্রথমে দেশ, তার পর দল, শেষে ব্যক্তি’।
গতকাল আডবাণীর সেই ক্ষোভকে হাতিয়ার করেই ফের বিজেপি নেতৃত্বকে নিশানা করলেন রাহুল গান্ধী, মায়াবতীরা। আডবাণী-জোশীর মতোই ‘ক্ষুব্ধ’ আর এক প্রবীণ নেতা শান্তাকুমার প্রশ্ন তুললেন, কেন ৭৫ বছর বয়সের মাপকাঠিতে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করা হবে? হিমাচলের ধর্মশালায় সাংবাদিক সম্মেলন করে শান্তাকুমার বলেন, ‘আমার মনে হয়, বয়স বিচার্য বিষয় হতেই পারে। কিন্তু ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সেটাই একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না।’ প্রসঙ্গত, এই ৭৫ বছর বয়সের মাপকাঠিকে সামনে রেখেই এ বারের লোকসভায় আডবাণী, জোশী, সুমিত্রা মহাজনদের প্রার্থী করেনি বিজেপি।
কংগ্রেসে যোগ দিয়ে শত্রুঘ্নও বিজেপিতে প্রবীণদের করুণ অবস্থা নিয়ে মোদী-শাহর সমালোচনা করেছেন। বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও মন্তব্য করেন, আডবাণী বিজেপি নেতৃত্বকে বাস্তবের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও দিন কয়েক আগে মহারাষ্ট্রের একটি জনসভায় বলেছিলেন, ‘মোদী হিন্দু ধর্মের কথা বলেন। হিন্দু ধর্মে সব থেকে জরুরি গুরু। আডবাণীজি মোদীর গুরু। ওঁর অবস্থা দেখেছেন আপনারা? আডবাণীজিকে স্টেজ থেকে ধাক্কা মেরে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে!’ মোদ্দাকথা, ভোটের মুখে আডবাণীর ব্লগ বোমাকে হাতিয়ার করেই আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরা।