সাম্প্রদায়িকতা ও ভাগাভাগির রাজনীতির বিরোধীতায় এবার লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে ‘রাম’ভক্তদের একহাত নিলেন আরেক রাম। আরএসএস-এর কড়া সমালোচনার পাশাপাশি ধর্ম নিয়ে শুরু হওয়া রাজনীতির বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ারও ডাক দিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাম পুনিয়ানি। শুধু তাই নয়। ইতিহাসকে আশ্রয় করে তিনি দেখিয়ে দিলেন, ক্ষমতা দখল মানে রাজার বিরুদ্ধে রাজার লড়াই, কখনই এক ধর্মের সঙ্গে আর এক ধর্মের সংঘাত নয়।
শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন পুনিয়ানি। গতকাল, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ তার বক্তৃতায় বারবার উঠে এল সঙ্ঘ পরিবারের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা, আধিপত্যবাদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় তাদের মতাদর্শ সমর্থকদের বসানোর মতো গুরুতর অভিযোগ। তিনি সাফ জানান, আরএসএস, সঙ্ঘ পরিবারের সুরে কেউ সুর না মেলালেই হয়ে যান ‘দেশ বিরোধী’। তাঁর কথায়, ‘সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু মৌলবাদীরা আসলে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। যখন কোন রাষ্ট্র আধুনিকতার দিকে এগোয়, তখন এদের আসন নড়বড়ে হয়ে যায়। আর মৌলবাদীরা বলতে শুরু করেন তাঁদের ধর্ম সংকটে।
রাম পুনিয়ানি বলেন, ‘অনেকেই গবেষণা করেন। তাই রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রীরও মনে হয়েছিল কিছু করতে হবে। তিনি খুঁজে পেলেন হলদিঘাটের যুদ্ধে মহারানা প্রতাপের সঙ্গে লড়াইয়ে আকবর পরাজিত হয়েছিলেন! আচ্ছা তাই। এবার দেখি যুদ্ধে কারা লড়াই করেছেন। আকবর যুদ্ধে যাননি। জানি না তিনি সিএল, না ইএল নিয়েছিলেন! আকবরের সেনাপ্রধান ছিলেন রাজা মান সিং। আর মহারানা প্রতাপের সেনাপ্রধান হাকিম খান সুর। দু’পক্ষেই বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ছিলেন। তাহলে লড়াই কারা করলেন? কাদের মধ্যে লড়াই হল? এটাকে কখনই দুটো ধর্মের মধ্যে লড়াই বলা যায় না। এটা ক্ষমতার লড়াই, রাজার সঙ্গে রাজার লড়াই।’
তিনি আরও বলেন যে, ‘১৮৫৭ সালে ফিরে যাই। সিপাহি বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ কে ছড়িয়েছিলেন? মঙ্গল পান্ডে। আর ওই বিদ্রোহে কে সাহায্য করেছিলেন? বাহাদুর শাহ জাফর, রানি লক্ষ্মীবাই এবং আরও অনেকে। হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে লড়েছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। যার ফলে সমস্যায় পড়েছিল ইংরেজরা। আর এখান থেকেই তারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করল।’ গতকাল ঘণ্টাখানেক ধরে এমনই সব উদাহরণ টেনে এনে তথ্য দিয়ে ভারতের বহুত্ববাদী চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন পুনিয়ানি। বেঁধে দিয়েছেন সম্প্রীতির সুর। তাঁর সরস আর অননুকরণীয় বাচনভঙ্গিতে খুব সহজেই আগত শ্রোতাদের মন জিতে নেন তিনি।