বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে পুজোয় উপহার প্রদানই হোক, কিংবা বাম জমানার মন্ত্রীর চিকিৎসার বন্দোবস্ত, সবক্ষেত্রেই সৌজন্যতার মাইলফলক গড়েছেন তিনি। এবার রাজনৈতিক সৌজন্যের এক অনন্য নজির গড়ল তাঁর দল তৃণমূলও। কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর সভা হওয়ার কথা সোমবার। সভার মঞ্চ বাঁধা-সহ মঞ্চের সামনের দর্শকদের বসার জন্য অস্থায়ী শেডের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য সেই শেড সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের এমন সিদ্ধান্ত নজির হয়ে থাকবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, প্রায় এক মাস আগে কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী সভা করার জন্য এই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে রেখেছিল কোচবিহার জেলা তৃণমূল। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে থেকেই মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হয়ে যায়। অস্থায়ীভাবে মঞ্চের সামনে তৈরি করা হয় দর্শকদের বসার জন্য শেড। কিন্তু কয়েকদিন আগে জেলা বিজেপি এই মাঠেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা করার জন্য অনুমতি নেয় প্রশাসনের কাছ থেকে। তারপর থেকেই বিজেপি দাবি করতে থাকে, মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য তৈরি এই নির্মীয়মাণ মঞ্চ এবং দর্শকদের বসার অস্থায়ী শেড সরিয়ে ফেলতে হবে। মঞ্চ খুলে ফেললে একদিনের মধ্যে কীভাবে আবার মঞ্চ তৈরি হবে, এই প্রশ্ন তোলে তৃণমূল।
অবশেষে এসপিজির সঙ্গে কোচবিহার জেলা প্রশাসনের বৈঠকে মিলল সমাধান সূত্র৷ দুই পক্ষের কথা হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সৌজন্যতা দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চ ও ‘ডি জোন’ অক্ষুণ্ণ রেখে বাকি শেডের অংশ খুলে ফেলার সিদ্ধান্তে সম্মত হয় তৃণমূল। ফলে, পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ৭ এপ্রিল কোচবিহারের রাসমেলা মাঠেই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সভা৷ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সভার মূল মঞ্চ এবং ডি-জোন বাদ দিয়ে প্রায় সবকটি বাঁশের ছাউনিই সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সভায় লক্ষাধিক লোক হবে। তাই এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়েছিল মঞ্চ ও শেডের কাজ। তবে রাজনৈতিক সৌজন্যের খাতিরেই নিজেদের ক্ষতি স্বীকার করে নিচ্ছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচন প্রায় চলেই এসেছে৷ তার আগে জনসংযোগই ভরসা৷ ফলে, ইতিমধ্যেই ভোটপ্রচারে ঝড় তুলেছে তৃণমূল৷ তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে বিজেপি। এদিকে, আগামী ১১ এপ্রিল উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন৷ ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী দু’জনেই৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে এবং দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করতে ৮ এপ্রিল, সোমবার কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে সভা করবেন মমতা৷ কিন্তু তার ঠিক চব্বিশঘণ্টা আগে ওই একই জায়গা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার জন্য দিয়ে সৌজন্যতার দৃষ্টান্ত তৈরি করল তাঁর সরকার।