তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গেরুয়া শিবিরের ভােট-ম্যানেজার। তাই লোকসভা নির্বাচন শুরুর আগে বিজেপির হয়ে ভোট প্রচারে বেরিয়ে তিনি নাচছেন। গাইছেন। উড়ে বেড়াচ্ছেন গোটা রাজ্যজুড়ে। কিন্তু তবুও তাঁকে নিয়ে সন্দেহ যাচ্ছে না বিজেপি নেতৃত্বের। তিনি হিমন্ত বিশ্বশর্মা। আসামের অর্থ ও আরও নানা দফতরের মন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, বিজেপির নেতৃত্বে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আট রাজ্যের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে নিয়ে গঠিত নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (নেডা)-এর আহ্বায়ক। কংগ্রেস আমলেও বেশ ডাকাবুকো নেতাই ছিলেন। তরুণ গগৈয়ের মন্ত্রিসভাতেও দু’নম্বর জায়গাটি ছিল তাঁর। এখনও একই অবস্থা। তবু তাঁর নাকি মন ভাল নেই।
হিমন্ত চেয়েছিলেন তেজপুর কেন্দ্র থেকে লোকসভায় যেতে। সেইমতো রাজ্য নেতারা তাঁর নাম পাঠান। কিন্তু দিল্লী রাজি হয়নি। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ নাকি বলেছেন, গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল সামলাতে হবে হিমন্তকে। তাই প্রার্থী হওয়া চলবে না তাঁর। কিন্তু আসামের মিডিয়ায় অন্য খবর। গেরুয়া শিবির নাকি বিশ্বাসই করতে পারছে না প্রাক্তন এই কংগ্রেসিকে। তাই মেলেনি ভোটের টিকিট। অথচ হিমন্ত দাঁড়াবেন বলে ক্ষুব্ধ তেজপুরের বিজেপি সাংসদ রামপ্রসাদ শর্মা দলই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে শেষমেশ বিজেপি তেজপুরে এবার প্রার্থী করেছে পল্লবলোচন দাসকে। পল্লব আবার রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী। সেই পল্লবের হয়েই প্রচারে ঝড় তুলছেন হিমন্ত।
বুধবারই এক প্রচারসভায় নিজের অনুগতদের আবদারে নাচতে দেখা গেল হিমন্তকে। গাইলেন অসমিয়ায় ‘আকৌবার মোদী সরকার’। তার আগে সমালোচনা করলেন কংগ্রেসের। গোটা রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন সারদা ও সুইস বার্গার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অসম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই ডাকসাইটে নেতা। প্রতিদিনই তাঁর হেলিকপ্টার চক্কর মারছে। সব জায়গাতেই তাঁর মুখে শোনা যাচ্ছে কংগ্রেস-বিরোধী সমালোচনার ঝড়। কিন্তু তবুও সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ কংগ্রেস নেতারা অনেকেই বলছেন, হিমন্ত ফিরছেন। আসলে কংগ্রেসের বহু নেতার সঙ্গেই তাঁর সখ্য রয়ে গেছে এখনও। প্রকাশ্যে সমালোচনা করলেও ১০ জনপথের সঙ্গে নাকি নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে শুরু করেছেন হিমন্ত। খবর বিজেপি শিবিরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নেতার মতে, দিল্লীতে মোদীজি ফিরলে সমস্যা নেই। কিন্তু একটু বেকায়দা হলেই হিমন্তকে বিশ্বাস নেই। আসামের সাধারণ মানুষও কিন্তু একই কথা বলছেন বারবার। চা-দোকানি থেকে মাড়োয়ারি সমাজ— আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে হিমন্তই। এমনিতে তাঁর সমালোচকরা বলতে শুরু করেছেন হিমন্তের জাদু এখন অস্তমিত। নেডা ছারখার। এনপিপি–র কনরাড সাংমা নিজেই উঠে আসছেন বড় পরিসরে। অরুণাচলে বিজেপিতে কাঁপন ধরিয়ে মেঘালয়ে একাই লড়ছে এনপিপি। মিজোরাম বা সিকিমেও একাই লড়ছে। ত্রিপুরায় জোটে থেকেও আইপিএফটি ভোটযুদ্ধে আলাদা নেমেছে। সব মিলিয়ে সময়টা বেশ গোলমেলে হিমন্তের। সেইসঙ্গে অস্বস্তিতে আসামের গেরুয়া শিবিরও।