কংগ্রেসের দূর্নীতি, ব্যর্থতা এবং ঢালাও প্রতিশ্রুতিকে ঢাল বানিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু কর্মসংস্থান থেকে কালো টাকা, নোটবন্দী থেকে জিএসটি – একের পর এক জুমলায় মিথ্যার স্তূপে পরিণত হয়েছে মোদী সরকার। এনএসএসও-র সমীক্ষা, সিএমআইই-র রিপোর্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে গেরুয়া সরকারের ব্যর্থতার খতিয়ান।
দেশবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি মোদী দিয়েছিলেন, পাঁচ বছর পর তা বাস্তবের মাটিতে আছড়ে পড়েছে। কার্যত ফুটো হয়ে গেছে মোদী সরকারের স্বপ্নের ফানুস। খোদ বিজেপিকেই এখন বলতে হচ্ছে, কালো টাকা ফেরানো বা বছরে ২ কোটি চাকরি রাজনৈতিক চমক ছাড়া আর কিছুই নয়। গত পাঁচ বছরে প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারার ব্যর্থতাই এখন তাড়া করছে মোদীকে। এখানে তুলে দেওয়া হল মোদী সরকারের তেমনই ১০টি ব্যর্থতা যা ভবিষ্যতে মোদী সরকারের জন্য নেতিবাচক সংকেত নিয়ে আসতে চলেছে।
১। কালো টাকার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিঃ ক্ষমতায় আসার আগে করা বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম ছিল বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে এনে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, প্রত্যেকের ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। বলা বাহুল্য, দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা মেরে শিল্পপতিরা বিদেশ পালালেও, বিদেশ থেকে কালো টাকা আনার প্রতিশ্রুতি কেবল প্রতিশ্রুতিই হয়ে রয়ে গিয়েছে।
২। বেকারত্ব ইস্যুতে চরম ব্যর্থতা: দেশের আরেকটি জ্বলন্ত সমস্যা বেকারত্ব ঘুচিয়ে দেবেন বলে অনেকবারই দাবি করেছিলেন মোদী। কিন্তু বেকারত্বের অবস্থা যা ছিল তাই রয়ে গিয়েছে। উল্টে নোটবন্দি ও জিএসটির জোড়া ফলায় কর্মহারাও হতে হয়েছে লক্ষাধিক মানুষকে। এনএসএসও-র সমীক্ষা, সিএমআইই-র রিপোর্ট মোদী জমানায় কর্মসংস্থান নিয়ে সেই চিত্রটাই তুলে ধরেছে। এমনকী মুদ্রা যোজনা ও স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার মতো প্রকল্পও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
৩। ব্যর্থ মোদীর নোটবন্দী: ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরের সেই সন্ধ্যে কোনও ভারতবাসী ভুলতে পারবেন বলে মনে হয় না। অনেক স্বপ্ন, এই হবে ওই হবে, এমন অনেক আশ্বাস দিয়ে পুরনো নোট বন্ধ করলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ফলস্বরূপ ব্যাঙ্ক ও এটিএমের লাইনে দাঁড়িয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর বেশি আর কোনও লাভই হয়নি।
৪। শিকেয় নমামি গঙ্গে যোজনা: অনেক ঢাকঢোল পিটিতে গঙ্গার জলকে স্বচ্ছ করতে নমামি গঙ্গে প্রোজেক্ট শুরু করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বাজেট ছিল প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা। কিন্তু পাঁচ বছরের শেষে দেখা যাচ্ছে এই যোজনা কার্যত বিশ বাঁও জলে। কারণ, এই প্রকল্পে প্রস্তাবিত অর্থের সিংহভাগ টাকা খরচই করে উঠতে পারেনি মোদী সরকার। ফলে কাজও হয়নি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টও বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গঙ্গার দূষণ মাত্রাতিরিক্ত।
৫। মুখ থুবড়ে পড়েছে আদর্শ গ্রাম যোজনা: ভারতকে উন্নত করতে গেলে যে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে করতে হবে তা জানতেন মোদী। সেই কারণেই প্রত্যেক সাংসদ পিছু ৫টি করে গ্রাম দত্তক নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ৫ বছর কেটে গেলেও হাতে গুনলে এমন খুব কমই গ্রাম পাওয়া যাবে যা আদর্শ গ্রাম রূপে উঠে এসেছে।
৬। অশান্ত উপত্যকা: বিগত ১ বছরে উপত্যকার সিমান্তবর্তী এলাকায় যতবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে এবং সাধারণ মানুষকেও এর মাসুল গুণতে হয়েছে তা আগে কখনও হয়নি। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে নাম লেখানোর ঘটনা বেড়েছে । উরি ও পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা ঘটেছে। লাগাতার গুলিবর্ষণ এবং পাক রেঞ্জার্সের সঙ্গে এনকাউন্টারে জওয়ানদের প্রাণ হারানো যেন রুটিনে পরিণত হয়েছে। মক্কা মসজিদ ও সমঝোতা বিস্ফোরণের অভিযুক্তরা মুক্তি পাওয়ায় এনআইএ-র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
৭। এভারেস্টে উঠেছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম: প্রত্যেক কেন্দ্রীয় সরকারের জন্যই এই দুই পেট্রোপণ্যের দাম আয়ত্তের মধ্যে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতায় আসার আগে মোদীও কংগ্রেস সরকারের এই দুর্বলতার উপর বারবার হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সরকারের আমলেই পেট্রোলের দাম ৮৫ টাকা লিটার পর্যন্ত উঠেছে। যা আগে কখনও হয়নি।
৮। দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি স্পর্শকাতর: দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে সামাল দিতে মোদী সরকারের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। দেশের ভিতরেই ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্রের বেশ কিছু জেলায় মাওবাদীদের প্রভাব এখনও চরমে। প্রতি মাসেই মাও হামলায় প্রাণ খোয়াতে হচ্ছে জওয়ানদের। দেশের ভিতর অভ্যন্তরীণ হামলাতেই বিগত চার বছরে শতাধিক সেনার মৃত্যু হয়েছে। এই পরিসংখ্যান মোদীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিফলতাই প্রমান দেয়।
৯। নেপালের সঙ্গে সম্পর্কও তলানিতেঃ প্রধানমন্ত্রী নেপাল সফর করলেও গোড়াতেই গলদ রয়েছে। মধেশিয়া ইস্যুর কারণে নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। নেপালের নতুন সংবিধান লাগু হওয়ার পর মধেশিয়ার প্রতিনিধিরা তার বিরোধ করেছিলেন। তখন ভারত মধেশিয়াকেই সমর্থন জানিয়েছিল। একই সঙ্গে পেট্রোল ডিজেলের মতো আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের রপ্তানিও আটকে দেওয়া হয়। মাঝখানে এর ফায়দা তুলে নেপাল চীনের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
১০। রামমন্দির হয়নিঃ সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে রামমন্দির নির্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু সেটাও জুমলা হ্যেই থেকে গেছে। মোদী সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি। অধ্যাদেশও আনেনি। দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এখনও মধ্যস্থতার কাজ চলছে।
