একে তো রাজ্যের শাসক দল বিজেপি। তার ওপর প্রধানমন্ত্রী বলে কথা। তাই হরেক রকম প্রোটোকল। চার দিক মোদী-যোগীর ছবিতে ছয়লাপ। মঞ্চের পিছনেও তিনটি তাঁবু। সেখানে তৈরি হচ্ছে মিনি-পিএমও। মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য। ডজনখানেক ‘ব্র্যান্ড নিউ’ ল্যান্ড-ফোন বাক্স থেকে বেরোচ্ছে। হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী নামবেন। গতকাল এই ছবিই দেখা গেছিল যোগীর রাজ্যে। সেখানে মোদীর মোট তিনটি সভা আজ। প্রথমটি আমরোহায়। তার পরে কৈরানায়। যে কৈরানার উপনির্বাচনে বিরোধী জোট ইতিমধ্যেই কুপোকাত করেছে বিজেপিকে। ফলে এত বাগাড়ম্বরের মধ্যেই গোবেচারা গোছের জনা কয়েক প্রৌঢ় দেহাতির কৌতূহলী চোখ ভিড় করেছে মঞ্চের পিছনে। সেটাই কৈরানার খুদানা গ্রামের আলপথ। সেখানেই কাল নামবেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রামের জমিতেই তৈরি হয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড। এরপরই দেরাদুনে উড়ে যাবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, দিনকয়েক আগেই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সভা করে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ধর্মীয় মেরুকরণ উস্কে দিয়েছেন। কাল তিনি যে ফের একই কাজই করবেন, তা হলফ করে বলা যায়। কিন্তু তিন দিন পরেই উত্তরপ্রদেশের এই পশ্চিম প্রান্তে মায়াবতী-অখিলেশ দেওবন্দে যৌথ সভা করছেন। রাহুলের ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরাও সামনের সপ্তাহে যৌথ সভা করবেন। ফলে তাড়না মোদীরও। বুয়া-বাবুয়া আর ভাই-বোনের জুটির আগেই বাজি মারতে চাইছেন। কারণ এই মুহূর্তে যোগীর রাজ্যে এমনিতেই বেকায়দায় বিজেপি। একাধিক সমীক্ষার ফলই বিপক্ষের দিকে যাচ্ছে। তার ওপর এই দুই জুটির ভূত তাড়া করে বেড়াচ্ছে চৌকিদারকে।
কিন্তু কী করবেন প্রহ্লাদ সিংহ-বিজয় সিংহরা? মঞ্চের পিছনে গ্রামের যে চাষিরা ভিড় করেছেন। চিনিকলে আখ পৌঁছলে দুই সপ্তাহে টাকা মেটানোর কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত টাকা পেয়েছেন। তারপর তিন মাস কেটে গিয়েছে, এখনও আখের টাকা পাননি। এই পরিস্থিতি গোটা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ জুড়েই। দিল্লী থেকে মেরঠ হয়ে মুজফফরনগর, কৈরানা থেকে সাহারানপুর—ছবিটা একই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা এই প্রশ্ন তুলছেন যে, আখ চাষিদের ১০ হাজার কোটি টাকা এখনও বকেয়া কেন?
বিশ বিঘা জমি প্রহ্লাদের। তবে তিন মাসের আখের দাম এখনও পাননি তিনি। তিনি বলেন, ‘শুনছি, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাকা না কি ব্যাঙ্কে এসেছে। ভোটের আগেই মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সে টাকা আজও আসেনি। এখন আবার অন্য বিপত্তি।’ কীসের বিপত্তি? প্রহ্লাদ বলেন, ‘যোগী আসার পর অকেজো গরুকে আর কেউ নিতেই চায় না। পাশের গ্রাম রামপুর-মণিহরণে গোশালা তৈরি হবে বলছে সরকার। সেখানেও তেমন কাজ এগোয়নি। অথচ এই গরুই তো এখন ফসল নষ্ট করছে। রাত জেগে এখন গরুর হাত থেকে ফসল পাহারা দেওয়াই আমাদের কাজ। মোদী বলেন, চৌকিদার হতে। মোদী-যোগীর জমানায় আমরা এখন গরুর চৌকিদার!’
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে মোদী-শাহের মাথাব্যথা বাড়িয়ে যাচ্ছে একের পর এক সমীক্ষা। দিন দুয়েক আগেই একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে, উত্তরপ্রদেশে এবার এনডিএ-র আসনসংখ্যা ৭৩ থেকে ৩৭টি কমে ৩৬-এ দাঁড়াতে পারে। এর আগেও, ইন্ডিয়া টুডে-কার্ভির করা এক প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষায় ফলে জানা গেছিল, ২০১৪ সালের নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীদের জেতা ৭৩টি আসনের মধ্যে এবারে বিজেপি পেতে পারে মাত্র ৫টি আসন। এই পরিস্থিতিতে বুয়া-বাবুয়া এবং ভাই-বোনের যৌথ সভার ভূত এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে চৌকিদারকে।