ভোটের মুখে নোটবন্দী, রাফাল, নাগরিকপঞ্জী-সহ একাধিক ইস্যুতে টালমাটাল গেরুয়া শিবির। কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরে গোষ্ঠীকোন্দল, দলের বর্ষীয়ান নেতাদের ক্ষোভ এমনিতেই চাপে রাখছে বিজেপিকে। তার ওপর বেকারত্ব, আচ্ছে দিনের জুমলা, ভোটের মুখে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের মতো একাধিক কারণে ক্রমশই ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এই বিপদের সময়েই তাঁর ভাগ্যে জুটল গানের গুঁতো। নেট দুনিয়ায় আবারও ভাইরাল হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তৈরি একটি ব্যঙ্গাত্মক গান।
কীর্তন আঙ্গিকে গাওয়া সেই গানে মোদীকে ‘রাজা’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। গানের শুরুতেই শোনা যাচ্ছে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, ‘এক যে রাজা আছে, আছে রাজা গদিতে বসিয়া/ রাজার কথা বলছি শোনও, শোনও মন দিয়া’। তারপরই বিগত ৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একাধিক জুমলাকে কটাক্ষ করে বলা হচ্ছে, ‘কিলো কিলো প্রতিশ্রুতি রাজা তো শোনান।’ শুধু তাই নয়, এরপরেই গানে উঠে আসে ‘আচ্ছে দিনে’ গরিব মানুষের দুর্দশার প্রসঙ্গ। বলা হয়, ‘রাজার আচ্ছে দিন তা ধিন ধিন আসবে ঘরে ঘরে, আচ্ছে দিনের গ্যাঁড়াকলে গরিব মানুষ মরে।’
গানে জায়গা পেয়েছে মোদী জমানায় দেশজুড়ে কৃষক মৃত্যুর প্রসঙ্গও। যা নিয়ে বরাবরই মুখে কুলুপ এঁটেছে মোদী সরকার। এমনকি নিজের ‘মন কি বাত’ বলার সময়ও সেই বিষয়টি এড়িয়েই গেছেন প্রধানমন্ত্রী। যা নিয়ে মোদীকে কটাক্ষ করে বলা হচ্ছে, ‘রাজার দরদ ভারী, গলায় দড়ি, কৃষক গাছে দোলে/ মন কি বাত শোনায় রাজা বল হরি বলে।’ পাশাপাশি, নোটবন্দী আর দেশের বেকারত্ব ইস্যুতেও খোঁচা দেওয়া হয়েছে তাঁকে। গানের কথায় রয়েছে, ‘ক্যাশলেস ইন্ডিয়াতে হল সবার পকেট ফাঁকা’ বা ‘রাজা করে ফন্দি, নোটবন্দী, চোখে আঙুল দাদা/ কালো টাকা ধরার নামে কালো করল সাদা’র মতো তীব্র আক্রমণও। মোদ্দা কথা যে অভিযোগ বারবারই তুলে এসেছে দেশের বিরোধীরা, সেসবকেই তুলে ধরা হয়েছে এই গানে।
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের মুখে নিজেকে দেশের চৌকিদার প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছেন প্রধানমন্ত্রী। এবং তা করতে গিয়ে টুইটার অ্যাকাউন্টে নিজের নামের আগে ‘চৌকিদার’ কথাটিও লিখে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মোদীর দেখাদেখি দেশজুড়ে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরাও নেমে পড়েছেন ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ ক্যাম্পেনে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী আসলে আম্বানি-আদানিদের চৌকিদার। এমনকি নীরব মোদী-বিজয় মালিয়াদের দেশ ছেড়ে পালানোর ক্ষেত্রেও হাত রয়েছে বিজেপির। তাই গানে বাদ যায়নি ‘চৌকিদার’ প্রসঙ্গও। বলা হয়েছে, ‘রাজা চৌকিদার, বন্ধু তার পালায় দেশ ছেড়ে/ দেশের টাকা নীরব-সরব সবাই দিল ঝেরে’। এ-ও বলা হয়েছে যে ‘রাজা বন্ধুপ্রিয়, সঙ্গে নিও আদানি-আম্বানি।’
এমনকি মোদীর বিরুদ্ধে দেশের ঐতিহ্য লালকেল্লা বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে ওই গানে। এমনকি কেউ বিজেপি বিরোধী হলেই স্বঘোষিত ‘দেশপ্রেমী’ মোদী যে তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দিয়ে দেন, তা নিয়েও কটাক্ষ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘রাজা দেশপ্রেমী; দেশদ্রোহী দেশের জনগণ/ বিরুদ্ধ মত শুনলে রাজা ভীষণ রুষ্ট হন।’ এখানেই শেষ নয়। ভোটে ফায়দা তুলতে বিজেপি যে ভাগাভাগির রাজনীতি করছে, সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলছে, এই অভিযোগও তোলা হয়েছে ওই গানে। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘রাজা ধম্মো করে ভোটের তরে সম্প্রীতি খানখান/ ত্রিশূল ফলায় বিদ্ধ হল কত ভাইয়ের প্রাণ।’ যা মনঃপুত হয়েছে নেটিজেনদের। ঝড়ের মতো শেয়ারও করছেন তাঁরা। ফলে সবমিলিয়ে নির্বাচনের আগে এই গান যে মোদীর কাছে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার সামিল, তা বলাই বাহুল্য।