প্রতিশ্রুতি দিতেই ওস্তাদ তিনি। তবে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে ঠিক ততটাই ব্যর্থ। কারণ ২০১৪-র ভোট প্রচারে বেরিয়ে দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ৫ বছর পর তার সবকটাই ‘জুমলা’য় পরিণত হয়েছে। যেমন, গত লোকসভা ভোটের প্রচারের সময়ে মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি ক্ষমতায় এলে বছরে দু’কোটি নতুন চাকরি হবে। কিন্তু আদতে হয়েছে ক্যাঁচকলা। বছরে দু’কোটি চাকরি বা নতুন কাজের সুযোগ তৈরি তো দূর, বরং তাঁর জমানায় কাজ খুইয়েছেন বহু মানুষ।
গত এক বছরে ভারত ১ কোটি ১০ লক্ষ চাকরি খুইয়েছে, যার মধ্যে শুধু গ্রামীণ ক্ষেত্রেই খোয়া গেছে ৯০ লক্ষ চাকরি। মোদী সরকারের পাঁচ বছরের শাসনে উঠে এসেছে এই চিত্র। নাগরিক সমাজের অন্তর্গত কিছু গোষ্ঠীর করা একটি ‘চার্জশিট’ তেমনটাই দাবি করেছে। বুধবার এই ‘চার্জশিট’ প্রকাশ করে ওই গোষ্ঠীগুলি দেখিয়েছে ২০১৬ সালের নোটবন্দীর পরে অন্তত ৩৫ লক্ষ চাকরি খোয়া গেছে। এ ছাড়াও তাদের দাবি, ‘দীর্ঘদিন অনাহারে’ থাকার ফলে অন্তত দশটি রাজ্যে ২০১৫ সাল থেকে শিশু-সহ ৭৫ জন মারা গেছেন।
‘চার্জশিটে’ অভিযোগ করা হয়েছে, ওই ৭৫ জনের মধ্যে আধার সংযোগ কার্যকর হয়নি অথবা আধার তালিকায় নাম তোলা হয়নি বলে রেশন না পেয়ে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেইসঙ্গে আরও অভিযোগ যে, মিড-ডে মিলে খরচ ১০ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা (যা ছিল ২০১৪-‘১৫ সালে) থেকে কমিয়ে এনডিএ সরকার ২০১৮-‘১৯ সালে ৯ হাজার ৯৪৯ কোটি করেছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে জমে থাকা আবেদন ২০১৪-‘১৫ সালে ছিল সাড়ে ৮ লক্ষ। যা ২০১৭-‘১৮ সালে এক লাফে গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে ১৪ লক্ষে। এমনই দাবি করা হয়েছে ‘চার্জশিটে’।
এই ‘চার্জশিট’ প্রকাশ করে ‘মজদুর কিসান শক্তি সংগঠন’-এর সমাজকর্মী শঙ্কর সিং জানিয়েছেন, এনরেগায় বেতন না দেওয়ার মতো ‘প্রকৃত বিষয়গুলি’ আড়াল করা হয়েছে ধর্মীয় মেরুকরণ, সশস্ত্র বাহিনীর রাজনীতিকরণ আর যুদ্ধবাজ মানসিকতা দিয়ে। এরই মধ্যে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট, অশোক ইউনিভার্সিটি এবং আইআইটি-র মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫৪ জন বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং গবেষক এক বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।
ওই বিবৃতিতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তাঁদের পরামর্শ, ‘এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই খুব বিবেচনা করে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োজনে প্রয়োগ করুন।’ বিবৃতিতে সাফ জানান হয়েছে যে, ‘যারা পিটিয়ে মানুষ মারে ও নিগ্রহ চালায় এবং এ ধরণের কাজে উস্কানি দেয়, তাদের প্রত্যাখান করুন।’ সবমিলিয়ে দিল্লীর কুর্সি দখল করতে যেসব প্রতিশ্রুতি গত বার নরেন্দ্র মোদীর মূল অস্ত্র ছিল, এবারের ভোটে সেটাই গলার কাঁটা হয়ে উঠছে তাঁর সরকারের।