গণতন্ত্রে হার-জিৎ থাকেই। বিকল্পই গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এ রাজ্যকে পাখির চোখ করেও বাংলায় নিজেদের জমি শক্ত করতে পারেনি বিজেপি। দেশের নানা রাজ্যে ক্ষমতায় এলেও মমতার গড়ে তারা এখনও দাঁত ফোটাতে পারেনি সেভাবে। এমনকি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট শতাংশ ১৭ ছুঁলেও আসনের নিরিখে তারা দুইয়ের বেশি এগোতে পারেনি। ২০১৬ সালেও একাধিক ভুয়ো অভিযোগ তুলে টলাতে পারেনি বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থা, জনমত। তবে একাধিক বার মুখ পুড়লেও ২০১৯-এ আবারও আটঘাঁট বেঁধে নেমে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ জুটি। তাঁদের দাবি, রাজ্যে থেকে ২৩টি আসন পাবে বিজেপি। কিন্তু একে ‘দিবাস্বপ্ন’ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তাঁদের ব্যখ্যা, বিজেপি বাংলায় বিশেষ আসন সংখ্যা না জিতলেও একটি বড় সুযোগ পেয়েছিল দার্জিলিং কেন্দ্রে। ২০০৯ সালে তাদের হেভিওয়েট প্রার্থী যশবন্ত সিং, যিনি একসময়ে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের প্রথম সারির মন্ত্রী ছিলেন, আড়াই লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে ওই কেন্দ্র থেকে জেতেন। সেবার রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের মধ্যে জোট থাকা সত্বেও বিজেপির এই জয় কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। একজন বড় মাপের নেতার জয়তে পরিস্থিতি আরও অনুকূল ছিল বিজেপির পক্ষে, ওই সংবেদনশীল কেন্দ্রে কিছু করে দেখানোর এবং ভবিষ্যতে সমস্ত বাংলা জয়ের জন্যে একটি নীল নকশা তৈরী করা। তবে নির্বাচনে জিতে এসে যশবন্ত কোনও বিশেষ উদ্যোগই নেননি শুধু ভাষণ দেওয়া ছাড়া। এমনকি দীর্ঘকাল তাঁর কেন্দ্রমুখোও হননি তিনি। শেষ পর্যন্ত যশবন্তের ওপর রুষ্ঠ হয়ে স্থানীয় মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে একটি নিরুদ্দেশ হওয়ার নালিশ করে।
শুধু তাই নয়। পাহাড়ের তখনকার প্রধান শক্তি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ২০০৯ সালে যশবন্ত সিং এবং ২০১৪ সালে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে সমর্থন যোগায় তাদের গোর্খাল্যান্ড দাবি সফল করার লক্ষ্যে। ২০০৯ সালে তাও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ক্ষমতায় আসে এবং বিজেপি বিরোধী আসনে বসে। কিন্তু ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসলে মোর্চার প্রত্যাশা বৃদ্ধি পায় নতুন রাজ্য নিয়ে। কারণ, এর আগে বাজপেয়ী সরকারের আমলে ভারতে তিনটি নতুন রাজ্যের পত্তন হয়। ফলে বিমল গুরুং-এর দল আশা করে যে নতুন বিজেপি সরকারও সেই একই পথে হাঁটবে।
তবে আগের পাঁচ বছরের মতো আবারও বিজেপির সাংসদ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকারীদের নিরাশই করেন। আলুওয়ালিয়া মোর্চার সমর্থনে তৃণমূলের সেলেব্রিটি প্রার্থী বাইচুং ভুটিয়াকে প্রায় দু’লক্ষ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আসেন কিন্তু তাঁর মেয়াদকালে তিনি দার্জিলিং নিয়ে প্রায় কিছুই করেননি। তাঁর পূর্বসূরির মতো আলুওয়ালিয়াও অভিযুক্ত হয়েছেন নিজের কেন্দ্রে কম পদার্পন করার জন্যে। এমনকী, যখন ২০১৭ সালে যখন পাহাড়ে অশান্তির আগুন জ্বলছে, তখনও পাহাড়ের দলগুলি কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে গেলেও নয়াদিল্লীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া আসে না। যাতে ক্ষোভ দানা বাঁধে পাহাড়বাসীর মনে।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থানের ফলে মুখ থুবড়ে পরে গুরুংয়ের আন্দোলন এবং তিনি নিজেও। ফলে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রাজু সিং বিস্ত কতটা জিততে পারবে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে, তা বলা মুশকিল। একে তো মোর্চা এখন দ্বিখণ্ডিত ও দুর্বলতর, তার ওপর গত এক দশকে বিজেপির কাছ থেকে শুধুই হতাশা উপহার পেয়েছে পাহাড়ের মানুষ। তাই তৃতীয়বার যে তারা আর বিজেপির প্রতি বিশ্বাস রেখে ভুল করবে না, তা বলাই বাহুল্য।