বুধবার দুপুরে শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার পর থেকেই বাংলা-সহ গোটা দেশেরই নজর ছিল দিনহাটায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার দিকেই। সকলের একটাই কৌতুহল ছিল, চৌকিদারকে পাল্টা দিতে কী তোপ দাগেন তৃণমূল নেত্রী। নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেডে বক্তব্য রাখা তখনও শেষ হয়নি। তার মধ্যেই নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দিনহাটায় বক্তৃতা করতে ওঠেন মমতা। আর ভাষণের শুরুতেই নরেন্দ্র মোদীর মেয়াদ ফুরিয়েছে বলে তোপ দাগেন তিনি। তাঁর কটাক্ষ, ‘আমি এখন মোদীবাবুকে এক্সপায়ারিবাবু বলে ডাকবো।’
গতকাল সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আক্রমণাত্মক ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তব্যের শুরু থেকেই শিলিগুড়িতে বলা মোদীর প্রতিটি কথার জবাব দিতে শুরু করেন তিনি৷ শিলিগুড়ির জনসভায় মমতাকে উন্নয়নের রাস্তায় স্পিডব্রেকার বলে মিথ্যে অভিযোগ করেছিলেন মোদী। তাঁর জবাবে মমতা বলেন, ‘উনি বলছেন আমরা উন্নয়ন করিনি। গরিবদের জন্য কাজ করিনি। উনি গায়ের জোরে মিথ্যা বলছেন।’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘চৌকিদার মিথ্যাচার করবেন না৷ রোজ রোজ মিথ্যা কথা বলবেন না৷ বিতর্কে বসুন, আপনি প্রশ্ন করবেন, আমি খোলাখুলি উত্তর দেব৷ কোনও ভয় নেই আমার’৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোচবিহারে ছোট বেলা থেকে আসি৷ কিচ্ছু ছিল না এখানে৷ কোনও উন্নয়ন হয়নি৷ আজ হাসপাতাল হয়েছে, রাস্তাঘাট হয়েছে৷ আদিবাসীদের জন্য কাজ করেছে তৃণমূল সরকার৷ তফশিলিদের জন্য কাজ করেছে৷’ এরপরই উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার কী কাজ করেছে তা একে একে বলতে শুরু করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমরা সাড়ে সাত বছরে ৯ লক্ষ তফসিলি শংসাপত্র দিয়েছি। এর আগে ৭০ বছরে দেওয়া হয়েছিল মাত্র আড়াই লক্ষ শংসাপত্র। কোচবিহারে ছিটমহলের সমস্যার সমাধান করেছি। জমি নিয়ে জট কাটিয়েছি। ১১০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে ছিটমহলের উন্নয়নের জন্য।’
পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান যে, ‘কৃষকদের শস্যবিমার টাকা, খাজনা মকুবের টাকা দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। পরিবারের লোকের কাছে জমি হস্তান্তর করতে গেলে মিউটেশন ফি-ও তুলে দেওয়া হয়েছে। রাজবংশী, কামতাপুরি-সহ অন্যান্য জনজাতির জন্যও আমরা উন্নয়নের নানা প্রকল্প নিয়ে এসেছি।’ সেইসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, ‘বিজেপি বাংলার জন্য কিছুই করেনি৷ মোদীর দাবি, এ রাজ্যে আয়ুষ্মান ভারতের বাস্তবায়ন হয়নি। আচ্ছা, গরিব মানুষ এই রাজ্যে বিনা পয়সায় চিকিৎসা পান কি পান না? তৃণমূল সরকার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প করে দেখিয়েছে৷’
গতকাল বিজেপির বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে ভোট কেনার অভিযোগও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাধারণ মানুষ যাতে টাকার লোভে বিজেপিকে ভোট না দেন, সমর্থকদের সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন তিনি। এবং একইসঙ্গে এ-ও জানিয়ে দেন, যা-ই হোক, রাজ্যে ৪২টির মধ্যে ৪২টি আসনই জিতবে তৃণমূল। শুধু তাই নয়। দিনহাটার সভা থেকে ব্রিগেডে বিজেপির ‘হ্যাঙার’ সমাবেশকেও কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘টাকার হাঙর এখন হ্যাঙারে মিটিং করছে। ২৩ তারিখের পর হ্যাঙারের ভিতর ঢুকে যাবেন। বাংলার সাথে পাঙ্গা নিয়ে লাভ নেই।’ গেরুয়া শিবিরকে তাঁর পরামর্শ, ‘আগে দিল্লী সামলা, তারপর দেখিস বাংলা।’
সেনাবাহিনী নিয়ে মোদীর করা কটাক্ষের জবাবে মমতা বলেন, নির্বাচনী প্রচারে ভারতীয় সেনার প্রসঙ্গ আনা যাবে না বলে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করে সেনাবাহিনীর অপমান করছেন মোদী। বাংলায় নাগরিকপঞ্জি চালু নিয়ে বিজেপি নেতারা যে হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন, সেই প্রসঙ্গেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘দেশটাকে জবরদস্তি দখল করে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমি বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত আছি। আমাকে চমকে-ধমকে কিছু করা যাবে না।’ বিজেপি আসামের বাঙালিদের দেশ থেকে বের করে দিতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে বাংলাতে কোনও ভাবেই এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জি চালু করা যাবে না, এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘টাচ মি ইফ ইউ ক্যান, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান।’