সুপার কাপ এখন কার্যত মজার জায়গা হয়ে উঠছে। গত রবিবার চেন্নাই সিটি এফসি ৩-১ গোলে আইএসএলের দল এফসি পুনে সিটি’কে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। আই লিগের পর সুপার কাপেও ঝলসে উঠেছেন পেড্রো মানজি। আবার সোমবার রাতে কলকাতার এটিকে শেষ ১৫ মিনিট দুরন্ত ফুটবল খেলে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে রিয়াল কাশ্মীরকে। ভুবনেশ্বরে পরপর দু’দিন খেলা হলেও মঙ্গলবার আবার সুপার কাপের প্রি- কোয়ার্টার ফাইনালে জামশেদপুর এফসি ও চার্চিল ব্রাদার্সের ম্যাচ হল না। মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চার্চিল ব্রাদার্স ভুবনেশ্বরে যায়নি। বুধবার ছিল নেরোকা এফ সি এবং নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের ম্যাচ। মঙ্গলবার নেরোকা ম্যানেজার্স মিটিং বয়কট করায় সুপার কাপ এখন ‘সুপার তামাশায়’ পরিণত হয়েছে।
ভুবনেশ্বরে ২৯ মার্চ মূলপর্ব শুরু হওয়ার মুখে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফ সি আবার জোট ভেঙে বেরিয়ে এসে প্রি- কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। মঙ্গলবাব বয়কট পর্ব পুরোপুরি সমাপ্ত হল। আই লিগের সাতটি ক্লাব (কোয়েস ইস্ট বেঙ্গল, মোহন বাগান, নেরোকা, চার্চিল, কেরল গোকুলাম এফ সি, আইজল এফ সি ও মিনার্ভা এফসি) সুপার কাপ বয়কট করল। প্রশ্ন হল, এই সাতটি ক্লাব কী ধরনের শাস্তি পাবে? কিংবা আদৌ শাস্তি পাবে কিনা। ফুটবল অনুরাগী মধ্যে এই নিয়ে আছে কৌতুহল।
আই লিগ এবং সুপার কাপের নিয়ম খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, সাত দলের মধ্যে মোহন বাগানের অপরাধ তুলনামূলকভাবে কম। ইস্ট বেঙ্গল, আইজল, মিনার্ভা, নেরোকা, চার্চিল, গোকুলাম- এই ছ’টি দলের অপরাধ অনেক বেশি। মোহন বাগানের প্রায় দ্বিগুণ অপরাধ ওই সাতটি ক্লাবের। কেন? আই লিগ শুরুর মুখে অংশগ্রহণকারী ১১টি দল ফেডারেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। এই দশ পাতা চুক্তির তৃতীয় পৃষ্ঠার প্রথম কলামেই আছে শুধু আই লিগ নয়, ২০১৮-১৯ মরশুমে ফেডারেশন আয়োজিত যে কোনও প্রতিযোগিতায় খেলতে বাধ্য তারা। এই অনুচ্ছেদে সুপার কাপ কথাটি নেই। ফেডারেশন ইচ্ছাকৃতভাবেই ওই বয়ানে চুক্তিটি ড্রাফট করেছিল। কারণ আইএসএল ক্লাবগুলি যদি সুপার কাপে কোনও কারণে না খেলত তখন ফেডারেশন কাপ সংগঠন করত ফুটবল হাউস। উল্লেখিত ধারাটির একটি প্যারাগ্রাফ পরেই চুক্তির (সি) ধারায় বলা আছে আই লিগে অংশগ্রহণকারী দলগুলি নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতার (এখানে সুপার কাপ) নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য।
মোহনবাগানের শাস্তি কিছুটা কম হতে পারে। কারণ তাঁরা নাম নথিভুক্তই করেনি। আর ইস্ট বেঙ্গলসহ বাকি ছ’টি দল প্রথমে আই লিগের চুক্তিপত্রের ধারার ‘এ’ এবং ‘সি’ অনুচ্ছেদভঙ্গ করার দায়ে শাস্তি পাবে। এতে আর্থিক জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর ইস্ট বেঙ্গল সহ বাকি ছ’টি দল সাসপেন্ড হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিংবা আগামী দুই বছর খেলতে পারবে না সুপার কাপ। কারণ হিরো আই লিগ ২০১৯-এর নিয়মাবলীর অষ্টম পৃষ্ঠার ১০.৪ এর তিন ও চার উপধারায় স্পষ্ট বলা আছে, টুর্নামেন্টে নাম নথিভুক্ত করিয়ে না খেললে ফেডারেশন, এআইএফএফের কমার্শিয়াল পার্টনার আইএমজিআর এবং সংশ্লিষ্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এখানে ওড়িশা) স্বার্থ বিঘ্নিত হয়ে থাকলে পরিস্থিতির গভীরতা বিবেচনা করে সাসপেন্ড পর্যন্ত করতে পারে আই লিগ- সুপার কাপ কমিটি। আবার পুরো বিষয়টি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে পাঠিয়ে তাঁদের মতামত চাইতে পারে। প্রয়োজনে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি পুরো ব্যাপারটি পাঠাতে পারে ফেডারেশনের ওয়ার্কিং কমিটিতে। হিরো আই লিগের নিয়ম ভালো করে পড়ে দেখা গেল শাস্তির প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। প্রথমে ক্লাবগুলিকে শো-কজ করা হবে। যেহেতু আই লিগের ক্লাবগুলি যুক্ত তাই শো- কজের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হবে সবার আগে। তবে সেই সিদ্ধান্ত ১৩ এপ্রিলের আগে নেওয়া হচ্ছে না।