‘আসল চৌকিদার তো মমতা বন্দোপাধ্যায়। সারদা কাণ্ডের মূল পান্ডা সুদীপ্ত সেনকে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে জেলে ঢুকিয়ে নজির গড়েছেন তিনি।’ মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের নির্বাচনী সভা থেকে এ কথা সাফ জানিয়ে দিলেন সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে দীপাবলির ‘শ্যামা পোকা’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি।
মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকের সমর্থনে চণ্ডীর ঝাড়ে ছিল নির্বাচনী সভা। সেখানে তৃণমূলের যুব সভাপতি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কত বার আলিপুরদুয়ারে ছুটে এসেছেন, সেটা আপনারা ভালো করেই জানেন। আর এখানে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের দেখা মেলে পাঁচ বছরে এক বার। তাই, তাঁরা তো শ্যামা পোকা ছাড়া আর কিছুই নন।’ গতকালের সভায় স্থানীয় বিষয়গুলি তুলে ধরে বিজেপি-কে আক্রমণ ও নিজের দলের প্রচার করেন অভিষেক।
তাঁর কথায়, ‘গত বার লোকসভা ভোটের আগে আমরা বলেছিলাম, আলিপুরদুয়ারকে নতুন জেলার মর্যাদা দেবো। মমতা বন্দোপাধ্যায় সেটা করে দেখিয়েছেন। উল্টো দিকে, নিজেকে চা-ওয়ালা বলে পরিচয় দিয়ে বন্ধ চা বাগান খোলার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদী কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি। অথচ আমরা বন্ধ চা বাগানগুলি চালু করেছি।’ জনতার উদ্দেশ্যে অভিষেকের ঘোষণা, ‘এবার আমাদের জেতান, কথা দিচ্ছি গত পাঁচ বছরে আলিপুরদুয়ারের যা উন্নয়ন হয়েছে, তার চেয়ে তিন গুন বেশি উন্নয়ন করে দেখাব।’ পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, ‘মনে রাখবেন, এখানে আমাদের দলীয় প্রার্থী দশরথ তিরকে হলেও ভোটটা কিন্তু আপনারা মমতা বন্দোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন।’
উল্লেখ্য, গতকাল প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার হেলিকপ্টারে উড়ে এসেছিলেন অভিষেক। তারপর টানা ২০ মিনিটের বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদীকে ‘নকল চৌকিদার’ বলেও কটাক্ষ করেছেন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, নীরব মোদী, বিজয় মালিয়ারা হাজার হাজার কোটি টাকা গায়েব করে বিদেশে পালালেও তাঁদের ফেরানো যায়নি। আসলে মোদীই তাঁদের দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। অন্যদিকে, সারদা কাণ্ডের মূল পান্ডা সুদীপ্ত সেনকে কাশ্মীর থেকে কলার ধরে কলকাতায় এনে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে জেলে ঢুকিয়ে নজির গড়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তাই আসল চৌকিদার তো তিনিই।
পাশাপাশি ছোট ছোট ছড়া কেটেও, বিজেপির দিকে প্রশ্ন ও কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর অভিযোগ, ‘বিজেপি দেশের সেনাবাহিনীকে পৈতৃক সম্পত্তি বলে মনে করছে।’ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পতন আসন্ন। ২ মাস পরে তাদের পাওয়া যাবে না। গত ৫ বছরে একটানা দেশে পেট্রোল, কেরোসিন, রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে। ডলারের মূল্য হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তবে ৫টি বিধানসভা নির্বাচনে যেই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসের দাম কমিয়েছে।
কেন বিজেপিকে একটিও ভোট নয়? তার কারণ তুলে ধরে অভিষেক জানান, ‘নোটবন্দি, জিএসসটিতে গোটা দেশের ছোট, সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ধ্বংস হয়েছে। অমিত শাহের এনআরসি হুঙ্কার প্রসঙ্গে অভিষেকের পাল্টা আর্জি, ‘আপনারা বিজেপিকে এনআরসি করুন। আর সেই জন্য ব্যালটে তার জবাব দিয়ে বিজেপির শেকড় ধরে টান মারুন।’ মানুষকে সতর্ক করতে তিনি এ-ও বলেন যে, ‘আবার যদি আপনারা বিজেপিকে ক্ষমতায় ফেরান, তাহলে ৫ বছরে রান্নার গ্যাসের দাম হবে ২০০০ টাকা, পেট্রল ১০০ টাকা পেরিয়ে যাবে।’