দেশে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে। বিগত ৫ বছরে একাধিকবার কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। বিজেপির ভাগাভাগির রাজনীতির প্রতিবাদে বারবারই নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে বিরোধীরা। আর এবার ঠিক ভোটের মুখে ধর্ম দিয়ে দেশকে ভাঙার চেষ্টার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কড়া সমালোচনা করলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। মোদীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘দেশটাকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করছেন উনি। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
শুধু তাই নয়। কেন জম্মু-কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা (সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা) তুলে দেওয়ার জন্য ‘এত ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন মোদী’, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জেডিএস প্রধান। মঙ্গলবার ব্যাঙ্গালোরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দেবগৌড়া বলেন, ‘দেশটাকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর মতলব ভাঁজছেন মোদী। কেন উনি জম্মু-কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা- সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারার বিলোপ চাইছেন? আমার প্রশ্ন, কেন উনি ওই অনুচ্ছেদের বিলোপ চাইছেন?’
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি খুব সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ ধারার অবলোপের দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতেই দেবগৌড়া বলেন, ‘আমি নিজে যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, তখন করতে দিইনি। ভারতে সংযুক্তির সময়েই কাশ্মীরের তদানীন্তন মহারাজার সঙ্গে সংবিধানে ওই ধারার রাখার ব্যাপারে চুক্তি হয়েছিল। তা হলে এখন কেন তার বিলোপ করতে চাইছেন মোদী?’ উল্লেখ্য, গতকাল হাসন লোকসভা আসনে প্রচারে গিয়েছিলেন জেডিএস প্রধান। সেখানে জেডিএস-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী দেবগৌড়ারই নাতি প্রাজ্জ্বল রেভান্না।
নাতির হয়ে প্রচার সফরের ফাঁকেই দেবগৌড়া সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন তোলেন, ‘কাশ্মীরে কি শুধু হিন্দুরাই থাকেন? তা তো নয়। জম্মু-কাশ্মীরে থাকেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা। থাকেন মুসলিমরা। আবার হিন্দু ব্রাহ্মণ, পণ্ডিতরাও থাকেন। থাকেন আরও নানা জাতের আরও নানা রকম সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের সকলের কথা ভেবেই সংবিধানে ৩৭০ ধারাটি বানানো হয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকদের দেওয়া হয়েছিল কিছু বিশেষ সুযোগসুবিধা।’
দেশের সংবিধানের মূল মন্ত্র যে ধর্মনিরপেক্ষতা, তা মনে করিয়ে দিয়ে দেবগৌড়া সাংবাদিকদেরই প্রশ্ন করেন, ‘আমি কি হিন্দু নই? আমি কি মুসলিম? নাকি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী? নিজে হিন্দু বলেই কি আমি চাইব দেশের সংবিধানকে শুধুই হিন্দুদের স্বার্থ দেখার মতো করে বানিয়ে নিতে? কখনই তা চাইতে পারি না। সব জাতি, সব সম্প্রদায়েরই স্বার্থ দেখতে, তা রক্ষা করে চলতে হবে আমাদের। আমাদের সংবিধানে সে কথাই বলা রয়েছে।’
ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত কতটা গভীরে, তা বোঝাতে স্বাধীনতার আগে অবিভক্ত বাংলার নোয়াখালিতে সাম্প্রদায়িক হিংসা রুখতে মহাত্মা গান্ধী কী করেছিলেন, কী বলেছিলেন, তা মনে করিয়ে দেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সংবিধানের প্রণেতা আম্বেদকরের কথাও তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘গান্ধী আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আম্বেদকর একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। কিন্তু বিজেপি কি আমাদের কোনও স্বাধীনতা দিচ্ছে?’ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েই মোদী সরকারের ওপর চাপ বাড়ালেন দেবগৌড়া।