রাজ্যে রাম-বাম এক হয়ে গেছে, এই অভিযোগ আগেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার দেখা গেল প্রকাশ্যেই চলে এল বিজেপির বাম-প্রীতি। বিজেপির সমর্থনে দেওয়াল লিখন। দেওয়ালে লেখা বিজেপি প্রার্থীরই নাম। পাশে রংচঙে পদ্ম। তবে প্রার্থীর নামের আগে সবুজ কালিতে লেখা কমঃ (কমরেড)! যেমনটা বামপ্রার্থীদের নামের আগে থাকে! এ নিয়ে ভোটের আগে এবার মুখ পুড়ল সিপিএম-বিজেপি উভয়েরই।
আসলে বাংলায় বামেদের অবস্থা শোচনীয় হওয়ার পর থেকেই সিপিএম ছেড়ে বামকর্মীরা একে একে যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে। আর কথায় বলে, ‘স্বভাব যায় না মলে’। তাই সিপিএমের হয়ে দেওয়াল লিখনে অভ্যস্ত কর্মীরাই এখন বিজেপির হয়ে দেওয়াল লিখতে গিয়ে এই বিপত্তি ঘটিয়ে ফেলেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, ক’দিন আগেই ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের প্রচারে গিয়ে কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ের মাঝেই শুনেছিলেন ‘লাল সেলাম’ স্লোগান। এ বার ঝাড়গ্রামের পদ্ম-প্রার্থীর কুনার হেমব্রমের সমর্থনে লেখা ওই দেওয়ালের ছবি ছড়িয়েছে সমাজ মাধ্যমে । জঙ্গলমহলের জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
এই কাণ্ড ঘটল কী করে? বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর সাফাই, ‘ওটা আমাদের কোনও দেওয়াল লিখনই নয়। কোথায় এমন দেওয়াল লেখা হয়েছে আমরা তার হদিস পাইনি।’ অন্যদিকে, এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদার দাবি, ‘জঙ্গলমহলে সিপিএমের লোকেরাই বিজেপি-র হাত শক্ত করছেন। সিপিএমের সেই সব কমরেড পুরনো অভ্যাসে এ সব লিখে থাকতে পারেন।’
এই প্রথম নয়। ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রমের সমর্থনে দেওয়াল লেখা নিয়ে আগেও এক দফা বিতর্ক হয়েছে। খড়গপুর আইআইটির এই প্রাক্তনী ১৯৮৯-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ভারত সরকারের ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন লিমিটেড (এনবিসিসি)-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে ঝাড়গ্রামেই কনসালটেন্সি ফার্ম খুলেছেন।
নয়াগ্রামের এক দেওয়ালে কুনারের নামের আগে ডাঃ লেখা নিয়ে বিতর্ক বাধে। কুনার নিজেই জানিয়েছিলেন তিনি পিএইচডি নন। তখন অবশ্য বিজেপি-র জেলা সভাপতি সুখময় স্বীকার করেছিলেন, একটা দেওয়াল লেখায় কোনও ভাবে ভুল হয়ে গিয়েছিল। পরে তা শুধরেও নেওয়া হয়। ফলে আবারও দেওয়াল লিখনে বিপত্তি ঘটায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, সারা রাজ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জঙ্গলমহলেও বামেদের বহু কর্মী-সমর্থক এখন গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন, তা ভাল মতোই জানেন জেলার বিজেপি নেতারা। বিশেষ করে গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে-পরে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের প্রবণতা দেখা গিয়েছিলেন। ফলে, বিজেপির অন্দরেও এখন জোর গুঞ্জন, তাঁদের কেউ এ রকম দেওয়াল লিখতেই পারেন।