এপ্রিল মাস চলে এলেও সেই অর্থে কাহিল করে দেওয়া গরম এখনও অনুভূত হচ্ছে না। বেলা বা দুপুরে বেশ গরম লাগলেও রাতের দিকে থাকছে ফুরফুরে হাওয়া। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গত ৬ বছরের মধ্যে এই মার্চেই সবথেকে কম গরম কলকাতায়।
২০০৬ সালে মার্চের শেষেই কলকাতার তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২০১৪ সালেও এক ছবি। ৩০ মার্চ চল্লিশের দোরগোড়ায় থেমেছিল পারদের দৌড়। সেখানে ২০১৯-এর মরশুমে প্রকৃতি অনেকটাই সদয়। মার্চে মহানগরের পারদ ৩৫.৫ ডিগ্রির উপরে উঠতে পারেনি। মার্চে পারদের এমন কম লাফ চলতি শতকে অন্তত দেখেনি কলকাতা। আর গোটা মাসের নিরিখে দেখা যাচ্ছে, ১৬ বছরে সবচেয়ে কম গরম এই মার্চেই। আলিপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় দাঁড়িয়েছে ৩২.২ ডিগ্রিতে। কম দহনের এমন স্বস্তি শেষ মিলেছিল ২০০৩ সালে- ৩২.০ ডিগ্রি।
সাধারণত, উত্তর-পশ্চিম ভারতের তাপপ্রবাহের রেশ বাংলার উপর পড়ে। পশ্চিমি ঝঞ্ঝার আনাগোনায় এখনও পর্যন্ত দিল্লি-সহ উত্তর ভারতে প্রবল গরম পড়েনি। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরে ঠায় দাঁড়িয়ে উচ্চচাপ বলয়। যা পশ্চিমাঞ্চলে তৈরি হওয়া বজ্রগর্ভ মেঘকে জলীয় বাষ্পের জোগান দিয়ে গিয়েছে। গত ক’দিনের বৃষ্টি তার প্রমাণ। কলকাতার ভাগ্য সে ভাবে না-খুললেও বৃষ্টি পেয়েছে বহু জেলা। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ। এর ফলে এখনও পড়েনি তেমন গরম।
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘সাধারণত মার্চে গ্রীষ্মের ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এ বছর কালবৈশাখী এসেছে ফেব্রুয়ারিতেই। পশ্চিমি ঝঞ্ঝার হাত ধরে মার্চেও দফায় দফায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। তাই গরম কখনওই সে ভাবে বাড়তে পারেনি।’ সাধারণত, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মিলিয়ে ১-২টি কালবৈশাখী পাওয়ার কথা কলকাতার। এ বার ঝুলিতে তিন দিনে চারটি কালবৈশাখী। সঙ্গে অতিবৃষ্টি। ফেব্রুয়ারিতে ১৪৬.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল, মার্চে ৬৯.৬ মিলিমিটার।
তবে স্বস্তি মিললেও গ্রীষ্ম একেবারে স্বমহিমায় নেই, তা নয়। তাপপ্রবাহ চলছে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে। পারদ চড়েছে ৪৩-৪৪ ডিগ্রিতে। রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশেও তাপপ্রবাহের সতর্কতা। বাংলায় গরম কত দিন ‘নরম’ থাকে, মানুষের নজর এখন সেইদিকেই।