তিনি দেশে ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ৫ বছর আগে আচ্ছে দিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েই দিল্লীর কুর্সিতে বসেছিলেন তিনি। তবে ক্ষমতায় আসার পর দেখা গেল, সেই সব প্রতিশ্রুতিই ছিল আদতে এক একটা জুমলা। কারণ তাঁর শাসনকালে আমজনতার কোনও ‘বিকাশ’ তো হয়ইনি, বরং ভেঙে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। যা নিয়ে একাধিকবার ক্ষোভও উগড়ে দিয়েছে বিরোধীরা। কোনও কাজই যে হয়নি, তা একপ্রকার স্বীকার করে নিয়েই তাঁর শাসনকালের মেয়াদ ফুরনোর সময় মোদী বললেন, যদি ফের ক্ষমতায় আসেন তিনি, তা হলে সেই স্বপ্নপূরণের কাজে হাত দেবেন।
প্রসঙ্গত, এমন মন্তব্যের পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তা হলে গত পাঁচ বছরে তিনি কী করেছেন? তার জবাবে শুধু সাফাই গেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গর্ত ভরতেই অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। যেখানে যাঁর যা প্রয়োজন ছিল, সেগুলিই পূর্ণ করার চেষ্টা করেছেন। কোথাও শৌচালয় নেই, করেছেন। রাস্তা নেই, রেল লাইন নেই, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, বাস নেই, বিমানবন্দর নেই— সেগুলি পূরণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সে কাজেও যে ‘খামতি’ থেকে গিয়েছে, সেটিও কবুল করলেন। সঙ্গে জুড়লেন, ‘আগামী পাঁচ বছর সেই খামতি পূরণ করব। আর মানুষের স্বপ্নপূরণের কাজে হাত দেব।’
উপলক্ষ ছিল ‘আমিও চৌকিদার’ অনুষ্ঠান। রাফালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানটি জনপ্রিয় করে তুলেছেন রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা। ভোটের মুখে সেই স্লোগানের অভিমুখ ঘোরাতেই ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী। নিজের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে গোটাটাই ভাগ করে দিতে চেয়ে সকলকেই ‘চৌকিদার’ হতে বলছেন। এমনকি এই কারণেই গতকাল অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ, যোগী আদিত্যনাথদের দেশের নানা প্রান্তে বসিয়ে ভিডিওর মাধ্যমে নব্য ‘চৌকিদার’দের সঙ্গে আলাপচারিতা করলেন। আর নিজে থাকলেন দিল্লীতে, তালকাটোরা স্টেডিয়ামে।
গতকাল নাম না করে রাহুলকে মোদী বলেন, ‘কিছু লোকের বুদ্ধি বাড়ে না। চৌকিদার বলতে কিছু লোক ভাবেন, হাতে লাঠি, মুখে হুইসেল, পরনে ইউনিফর্ম। কিন্তু চৌকিদার সকলে। গ্রাম, শহর, স্ত্রী, পুরুষ, শ্রমিক, চিকিৎসক- সকলে।’ সংসদে রাহুলের আলিঙ্গন নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘কিছু লোক গলায় পড়ে যান।’ আসলে রাহুলের একের পর এক অভিযোগের ধাক্কায় এমনিতেই বেকায়দায় মোদী। তার ওপর সমস্যা বাড়িয়েছে রাহুলের ‘ন্যায়’ প্রকল্প। সে কারণেই রাহুলকে বিঁধে এত কথা বলতে হল তাঁকে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘ভোটের মুখে নিজের ব্যর্থতা কবুল করলেন প্রধানমন্ত্রী। ন্যায় প্রকল্পের হিসেব আমাদের কষা আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একটিও প্রতিশ্রুতি পালন করেননি। ২০২২-এ কৃষকদের আয় কী করে দ্বিগুণ করবেন, সে হিসেব দেননি। তাঁর বিদায় এ বার নিশ্চিত।’ অন্যদিকে, দিল্লীর কুর্সি দখলে যে প্রতিশ্রুতি গতবার মোদীর মূল অস্ত্র ছিল, এবার ভোটে সেটাই গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে তাঁর। গত লোকসভা ভোটের প্রচারের সময়ে তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি ক্ষমতায় এলে বছরে দু’কোটি নতুন চাকরি হবে। কিন্তু দু’কোটি চাকরি তো দূর, তাঁর জমানায় কাজ খুইয়েছেন বহু মানুষ। যে কারণে ‘ম্যায় ভি বেরোজগার’ ক্যাম্পেন শুরু করেছে কংগ্রেস।