সম্প্রতি একটি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘ব্যাঙ্কের কাছে বিজয় মালিয়ার ৯০০০ কোটি টাকার ঋণ ছিল। কিন্তু সরকার গোটা দুনিয়া খুঁজে তাঁর ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এখন উনি সমস্যায় পড়েছেন কারণ আমার প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ফেরৎ নিচ্ছি।’ এবার এই কথার সূত্র ধরেই পলাতক কিংফিশার কর্তা জানিয়ে দিলেন, ‘আমি যে প্রতারক নই এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নিজের কথা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’ রবিবার টুইটারে তিনি লেখেন, ‘আমি বিনীত ভাবে জানাতে চাই আমি যে প্রতারক নই এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নিজের কথা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যখন তাঁর সরকার ব্যাঙ্কের কাছে আমার যা দেনা তার থেকে অনেক বেশি অর্থ উদ্ধার করে নিয়েছে। আমি যে ১৯৯২ সাল থেকে ব্রিটেনের বাসিন্দা সেটা অবশ্য বেমালুম উপেক্ষা করা হয়েছে। আমি পালিয়েছি এটা বোঝাতে বিজেপিকে এমন বলতেই হত।’
তিনি যে প্রতারক নন, তা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন। দেনা বাবদ তাঁর যা দেওয়ার কথা ছিল, তার থেকে বেশি উদ্ধার করে নিয়েছে মোদী-সরকার। এরপরেও কেন পুরনো বুলি কপচে যাচ্ছেন বিজেপি মুখপাত্র? এবার সেই প্রশ্নই তুলেছেন মালিয়া। পলাতক লিকার ব্যারনের মন্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাক্ষাৎকার দেখলাম। এ-ও দেখলাম উনি বলেছেন যে যদিও ব্যাঙ্কের কাছে আমার দেনা ছিল ৯০০০ কোটি টাকা, তাঁর সরকার আমার ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করেছে। সুতরাং উচ্চতর কর্তৃপক্ষ বকেয়া পুরো অর্থ উদ্ধারের কথাই জানিয়েছেন। এখনও তাহলে বিজেপি মুখপাত্রেরা পুরনো কথা কপচে যান কেন?’
প্রসঙ্গত, ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত কিংফিশার এয়ারলাইন্সের প্রাক্তন কর্তা তাঁর প্রত্যর্পণের নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করার জন্য অনুমতি চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন। গত মাসেই সেই নির্দেশ সই করেছিলেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রসচিব সাজিদ জাভিদ। ব্রিটেনের বিচারবিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, এ সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র ইতিমধ্যেই হাতে এসেছে। আপাতত একজন হাইকোর্ট বিচারকের কাছে সেটি পেশ করার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। সেখানেই স্থির হবে, ওই নথির ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে পুরোদস্তুর শুনানি হবে কি হবে না। যদি আবেদন গৃহীত হয়, তাহলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ‘সাবস্ট্যানটিভ হিয়ারিং’ হবে। নাহলে, ‘রিনিউওয়ালের’ সুযোগ পাবেন মালিয়া।
উল্লেখ্য, বিজয় মালিয়ার বিরুদ্ধে ৯০০০ কোটি টাকার ঋণ না মিটিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তারপর থেকেই তাঁকে ফেরত আনার চেষ্টা করছে ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। তাঁকে নিয়ে রাজনৈতিক ঝড়ও কিছু কম হয়নি। বিজেপির দাবি, ঋণ দিয়েছে কংগ্রেসের সরকার। আর কংগ্রেসের অভিযোগ, মালিয়াকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে মোদী সরকার। বিতর্কে নয়া মাত্রা যোগ হয় যখন গত বছর জুনে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে মালিয়া লেখেন, নরেন্দ্র মোদী এবং অরুণ জেটলিকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই অন্য মাত্রা নেয় এই অর্থ জালিয়াতি মামলা।