এক সময়ে রাজনীতির লড়াইয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তৃতা শুরু করতেন দু’জন। তবে এলাকায় জনশ্রুতি ছিল, পরস্পরের ‘বোঝাপড়া’ নাকি চমৎকার। সে জনশ্রুতি যে আদৌ মিথ্যে নয় তার প্রমাণ হয়ে গেল, যখন ভোটের মুখে ‘রাম’ভক্ত অর্জুন এসে পৌঁছল বাম-বন্ধু তড়িৎ-এর বাড়ি। হ্যাঁ, এবার ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ, একসময়ের দাপুটে সিপিএম নেতা তড়িৎ বরণ তোপদারের কাছেই গেলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং। যা নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে।
প্রসঙ্গত, দু’বারের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে তৃণমূল তাঁকে টিকিট দেয়নি বলে সম্প্রতি দল বদলে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন অর্জুন। এবং নতুন দলে এসেই লোকসভা ভোটের টিকিটও পেয়েছেন। অন্যদিকে, রাম-বামের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া আছে, এমন অভিযোগ তৃণমূলের দীর্ঘদিনের। এবার দেখা গেল, সেইমতোই পদ্মশিবিরের প্রার্থী অর্জুন হাজির হলেন তড়িতের বাড়িতে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদই অর্জুন ব্যারাকপুরের নোনাচন্দনপুকর সংলগ্ন এলাকায় তড়িতের বাড়িতে আসেন।
তবে অর্জুনের আসার কতগা আগে থেকে সে কথা তড়িৎ জানতেন কিনা, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি বিজেপি প্রার্থী। জানা গেছে, দুই নেতার মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হয়। অর্জুন-ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল কর্মী জানান, চা খেতে খেতে একান্তে কথা হয়েছে দু’জনের। ভোটের বাজারে দুই দলের দুই হেভিওয়েট রাজনীতিবিদ যদি একান্তে সময় কাটান, তা হলে এলাকায় গুঞ্জন হওয়ারই কথা। তাতে অবশ্য বিচলিত নন দু’জনের কেউই।
অর্জুন বলেন, ‘উনি দীর্ঘদিনের নেতা। আলাদা দলে হলেও আমার বাবার সঙ্গে উনি রাজনীতি করেছেন। দু’জনের সম্পর্কও ভাল ছিল। ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তার ধারে ওঁর বাড়ি। তাই একবার ঢুকে পড়লাম।’ তড়িতের বক্তব্য, ‘অনেকে অনেক কথাই বলবেন। তবে উনি আমার সঙ্গে শুধুমাত্র দেখা করেছে। আমি ২০ বছরের সাংসদ ছিলাম। আমার কাছে উনি আসতেই পারেন। এর বাইরে আর কোনও কথারই ভিত্তি নেই।’
কিন্তু দুজনের মধ্যে কী এত কথা হল? অর্জুনের জবাব, ‘আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলাম, উনি আশীর্বাদ করেছেন।’ আর রাজনীতির ময়দানে পোড়় খাওয়া নেতা তড়িৎ সহজাত ভঙ্গিতেই বলেন, ‘রাজনীতি নিয়েই কথা হয়েছে, তবে উনি আমার কাছে আর্শীবাদ চাইতেই এসেছিলেন। এর মধ্যে অন্য কোনও ব্যাপার নেই।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘সব কিছুরই কি আলাদা মানে থাকতে হবে? আমি কি এখন বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে যাব? সবটাই হাস্যকর।’
শুধুই কী সৌজন্য আর আশীর্বাদ, নাকি অন্য কিছু, প্রশ্নটা তবু ঘুরপাক খাচ্ছেই? এর আগে ভোটে দাঁড়িয়ে এমন কারও আশীর্বাদ তো নিতে দেখা যায়নি অর্জুনকে। অর্জুনের প্রতিক্রিয়া, ‘সেটাই তো ট্রেড সিক্রেট!’ অন্যদিকে, দলের এবং নিজের অস্বস্তি এড়াতে ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘আমি যত দূর জানি, এটা নেহাতই সৌজন্য সাক্ষাৎ। এর বাইরে আর কিছু নেই।’ তবে যতই তিনি বলুন না কেন এর বাইরে কিছু নেই, রাজ্য রাজনীতিতে এখন এইসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে যে, অর্জুনের ট্রেড সিক্রেট কি তাহলে ব্যারাকপুর আসনে বাম-রামের সমঝোতা? নাকি বামেদের আশ্রয় ছেড়ে এবার রামেরই শরণ নেবেন তড়িৎ?