প্রার্থী ঘোষণার আগে থেকেই গোটা দেশের পাশাপাশি বেকায়দায় বঙ্গের গেরুয়া শিবিরও। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে সেই পরিস্থিতি এখন হাতের বাইরে যেতে বসেছে। এই অবস্থায় আগে দল সামলাবেন, নাকি নিজের কেন্দ্র সামলাবেন, তা নিয়ে মহা ফাঁপড়ে পড়েছেন দিলীপ ঘোষ। একদিকে তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। অন্যদিকে, আবার মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীও। তাই ভোটের মুখে নিজের গড় সামলাবেন না দলের যুদ্ধে সেনাপতির মুকুট পরবেন, সেটাই এখন সবথেকে বড় মাথাব্যথার কারণ দিলীপের। শোনা যাচ্ছে, এই দুইয়ের ‘সংঘাতে’ নাকি রীতিমতো নাজেহাল তিনি। আপাতত সেনাপতির মুকুট মাথায় তুলে জেলায় জেলায় ছুটছেন ঠিকই, কিন্তু সন্দেহ নেই মন পড়ে মেদিনীপুরে। বিলক্ষণ জানেন, আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
মেদিনীপুরের বিজেপি নেতারা হা-পিত্যেশ করে বসে আছেন, কবে তাঁদের প্রার্থী কোমর বেঁধে প্রচারে নামবেন। তৃণমূল প্রার্থী মানস ভুঁইয়া প্রচার শুরু করে দিয়েছেন জোরকদমে। দেওয়াল লেখাতেও অনেক এগিয়ে। তৃণমূলের প্রচারের জাঁক দেখে মেদিনীপুরের নিচুতলার এক বিজেপি কর্মীর আক্ষেপ, ‘আমাদের প্রার্থীকে ছাড়াই প্রচার করতে হচ্ছে। এটা সত্যিই সমস্যা।’ দিলীপ অবশ্য বলছেন, ভোট সংগঠনের লড়াই। তাঁর কথায়, ‘মেদিনীপুরে তো লক্ষ লক্ষ কর্মী দিনরাত এক করে কাজ করছেনই। আমার কাজ শুধু তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। অন্য লোকসভা কেন্দ্রে ঘোরার ফাঁকে সময় বের করে আমি মেদিনীপুরের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে কর্মীসভা করে এসেছি। আবার মাঝখানে সময় পেলে ঘুরে আসব।’
দিলীপ ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতাদের মতে, ইচ্ছে থাকলেও এখনই মেদিনীপুরে গিয়ে পড়ে থাকার উপায় নেই তাঁর। কেননা, তিনি কতগুলি লোকসভা কেন্দ্রে সময় দিচ্ছেন, তার হিসেব রাখছে দিল্লী। বিজেপির সব রাজ্য সভাপতিই তাঁর রাজ্যের সব লোকসভা কেন্দ্রে একাধিক জনসভা করছেন ভোটের সময়। এটাই বিজেপির দস্তুর। তাই ভোটে লড়ছেন বলে বাড়তি কোনও ছাড় নেই দিলীপের। এমনকি শুক্রবার আলিপুরদুয়ারে অমিত শাহের সভায় হাজির থাকার ফুরসতও পাননি তিনি। কারণ জলপাইগুড়ির দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে কর্মীসভায় ব্যস্ত ছিলেন। সূত্রের খবর, ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে যাওয়ার প্রস্তাবও এসেছে দিলীপের কাছে। দিল্লী থেকে বার্তা এলে মেদিনীপুরের বদলে এপ্রিলের গোড়ায় ভিন রাজ্যে ছুটতে হতে পারে তাঁকে।
জানা গেছে, আজ, শনিবার সাংগঠনিক কাজে দিলীপকে দিনভর কলকাতায় থাকতে হবে। ১ এপ্রিল শিলিগুড়ি যাবেন প্রচারে। ২ তারিখ দিলীপ প্রচারে যাবেন দার্জিলিং এবং কালিম্পং। পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর জোড়া সভা রাজ্যে। ফলে মেদিনীপুরে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। ৪ তারিখ সকালে ফের শিলিগুড়ি। সেখানে অমিত শাহের কর্মীসভা। রাজ্য সভাপতি হওয়ায় দিলীপকে হাজির থাকতেই হবে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় জেলায় তাঁর ঠাসা কর্মসূচি।
মেদিনীপুরের বিজেপি নেতারাও বুঝে গিয়েছেন, আপাতত প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারে বেরনোর সুযোগ তাঁদের মিলছে না। তাই দিলীপকে জেলার সাংগঠনিক নেতারা অনুরোধ করেছেন যে, জেলা সফরের মাঝে ফুরসত পেলে তিনি ঘণ্টাখানেকের জন্য হলেও যেন একবার মেদিনীপুরে ঘুরে যান। তা না হলে কর্মীদের মনোবলে ভাটা পড়ছে। আসলে স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে যা ‘ফিডব্যাক’ পাচ্ছেন দিলীপ, তাতে তিনিও বুঝতে পারছেন, মেদিনীপুরে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে চলেছেন তিনি। তাই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আগামী রবিবার প্রচার সারতে এক বেলার জন্য তিনি মেদিনীপুর শহরে যাবেন বলে জানা গেছে। ভোটযুদ্ধে রাজ্যের সেনাপতির জামানত বাজেয়াপ্ত হলে দলের কর্মী-সমার্থকদের কাছে যে মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য।