পাড়া-পড়শির এন্তেকাল হলে কাছের গোরস্থানে দাফন হয়। কিন্তু গোটা গাঁয়ে তো মোটে দু’ঘর হিন্দু, বাকি সকলেই মুসলিম। শেষ যাত্রায় কাঁধ দিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাবার লোক কই? ভ্যানচালক অসীম হাজরার আবার টাকাকড়িও বিশেষ কিছু নেই যে মুখাগ্নি টুকু হবে। কাঁধ দেওয়া তো পরের কথা। খাট, ফুল, নতুন সাদা চাদর, টেম্পোর ভাড়াই বা জোগাবে? নাকাশিপাড়ার চ্যাঙা গ্রামের সেই মুসলিম বাসিন্দারাই কিন্তু চাঁদা তুলে, খাট-ফুলের বন্দোবস্ত করে, কাঁধ দিয়ে শবদেহ নিয়ে গেলেন শ্মশানে। চিতার আগুন নেভা পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে করে গেলেন সব।
দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্ট ও কিডনির রোগে ভুগছিলেন চ্যাঙা দক্ষিণপাড়ার বয়স ছাপান্নের অসীম হাজরা। শুক্রবার দুপুরে তিনি মারা যান। টানাটানির সংসার। দুই ছেলেও ভ্যান চালান। ভ্যান চালান অসীমের ভাই কাজল হাজরাও। কী ভাবে কী হবে তা নিয়ে তাঁরা যখন চিন্তিত, পাড়ারই কিছু যুবক এগিয়ে আসেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে মসজিদের মাইক দিয়ে সকলকে ডেকে টাকা তুলে ফেলা হয়। হবিষ্যি করার জন্য তোলা হয় চাল। বাঁশের মাচায় মৃতদেহ নিয়ে টেম্পোয় তুলে পাটুলি ঘাটে নিয়ে যান গ্রামবাসীই। সেখানেই শবদাহ করা হয়। মুখাগ্নি করেছেন অসীমের ছেলেরাই, কিন্তু সমস্ত সাহায্যই করেছেন যারা, তাঁরা সকলেই মুসলিম।
নিছক গাঁয়ের লোকের স্বাভাবিক দায়িত্ববোধ থেকে মানসিকতার দায়িত্ব থেকেই করেছেন হয়তো এই কাজ। কিন্তু এমন এক সময়ে করেছেন, যখন উগ্র ধর্মীয় প্রচারের জেরে ‘স্বাভাবিক’ ছবিগুলো দিনে দিনে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। অসীমের ভাই কাজল বলেন, “দাদার মৃত্যুর পরে আমরা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। গাঁয়ের মুসলিম ভাইয়েরা এগিয়ে না এলে কী করে সব কিছু করতাম, জানি না”। গাঁয়ের এক জন আফিরুল হক বলেন, “আমরা তো এক গাঁয়ের লোক। জাত নিয়ে কি হবে। আমি বাড়িতে ছিলাম। আমাদের এক বন্ধু আমানুল্লা এসে খবরটা দেয়। তখনই ঠিক করা হয় মসজিদের মাইকে।